বাংলাদেশ জামায়ত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো: নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, আমরা সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ চাই না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সঙ্ঘাত এড়ানোর লক্ষে আমরা আজকের কর্মসূচি স্থগিত করে আগামী ৪ আগস্ট (শুক্রবার) রাজধানীতে পুনরায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা আশা করছি, পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করবে।

মঙ্গলবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

রাজধানীতে আজ জামায়াত ঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রশাসনের সহযোগিতা না দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত ইসলামী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর।

নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী (উত্তর ও দক্ষিণ) এর উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গত ২৪ জুলাই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সমাবেশের বিষয়ে ২৫ জুলাই সকাল ১০টায় ই-মেইলে এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল জামায়াতের পক্ষ থেকে ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করে ও সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়। পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা চিঠিটি গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, আজকের সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। গতকাল (৩১ জুলাই) সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী কোনো দলের পক্ষ না হয়ে জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, ডিএমপি কমিশনার আমাদের সমাবেশ না করার জন্য মৌখিকভাবে জানানোর পাশাপাশি ডিএমপির মতিঝিল জোনের উপ পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াতকে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তারা যদি ডিএমপির সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে সমাবেশ বা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন নেই। সভা-সমাবেশ করা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধান প্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আরো লক্ষ্য করছি যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার জামায়াতে ইসলামীকে অন্যায়ভাবে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। যা আইনের শাসনের পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। বারবার সহযোগিতা চাওয়ার পরও সরকার সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো ধরনের সঙ্ঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্বল্প সময়ের নোটিশে সমাবেশ করতে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সেই দিন একটি সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ ঐতিহাসিক সমাবেশ উপহার দিয়েছিল, যা দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়েছিল। এবারো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছি। কিন্তু সরকার আমাদের সমাবেশ করতে না দিয়ে চরম অন্যায় করেছে। আমরা আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

‘আসলে এই সরকার স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিল করার কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে বদ্ধপরিকর। আমাদের এই দাবি আজ গণ দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা জনগণের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবো না, ইনশা আল্লাহ। তীব্র গণ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুলুমবাজ অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশা আল্লাহ।’

বুলবুল বলেন, অতীতের মতো আমরা নগরবাসীকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ চাই না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সঙ্ঘাত এড়ানোর লক্ষে আমরা আজকের কর্মসূচি স্থগিত করে আগামী ৪ আগস্ট শুক্রবার রাজধানীতে পুনরায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা আশা করি, পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা প্রদান করবে।

তিনি বলেন, আমরা আবারো পুলিশ প্রশাসনের সংবিধান ও গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কোনো দল বিশেষ নয়, দেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে প্রশাসনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কোনো দল চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। তাই কোনো দল বিশেষের নয়, দেশ ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করার জন্য আপনাদের আবারো আহবান জানাচ্ছি।

উল্লেখ, গত ২৮ জুলাই সকল মহানগরী এবং ৩০ জুলাই সকল জেলা সদরে শান্তিপূর্ণ মিছিলের কর্মসূচি ছিল জামায়াত। পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে জনগণের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি সফল হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েছে, হয়রানি করেছে, গ্রেফতার করেছে। গত পাঁচ দিনে ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াতের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।