জার্মানির বার্লিনে আয়োজিত স্পেশাল অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জয় করে দেশে ফিরেছেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় মোঃ ওয়াদুদ কবির তানাম। ১৯০ টি দেশের অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে তানাম প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এ পর্যন্ত তিনি ৫টি স্বর্ণপদক লাভ করেছে। তার এই সাফল্যে পাবনায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনা এই তানাম পাবনার জাগির হোসেন একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র। সে পাবনা সদর উপজেলার গোবিন্দা এলাকার হুমায়ুন কবির ও শারমিন নাহার মিলির দ্বিতীয় সন্তান।
সম্প্রতি জার্মানির বার্লিনে হয়ে গেলো স্পেশাল অলিম্পিক। বিশ্বের ১৯০টি দেশের স্পেশাল শিশু কিশোররা অংশ গ্রহন করে। বাংলাদেশের ৭৯ জন প্রতিবন্ধী। স্পেশাল অলিম্পিকে সর্বোচ্চ পদক জয় করে দেশে ফিরেছে তারা।
বাংলাদেশ দলে অংশ নেয়ার মধ্যে রয়েছে পাবনার ১২ জন শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে দলগত আর ব্যক্তিগত ইভেন্টে পদক জিতেছেন ৯ জন। এর মধ্যে সাঁতারে এককভাবে স্বর্ণপদক জয় করেছে মোঃ ওয়াদুদ কবির তানাম।
এক সময় তুচ্ছ—তাচ্ছিল্য আর সমাজে আর দশজনের অবজ্ঞায় বড় হওয়া এই সন্তান নিয়ে এখন গর্বিত তাদের অভিভাবকরা। অভিভাবকরা বলছেন, শিশুদের নিয়ে মানুষ নানান ধরনের কথা বলতো যখন তারা খেলতে যেত। শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়াতে অনেক অবজ্ঞার শিকার হতে হয়েছে তানামের। তবুও সে থেমে থাকেনি। তার প্রচেষ্টায় আজ বিশ্ব জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
তানাম কথা বলতে ও শুনতে না পারায় লিখিত ভাবে জানায়, সে ২০১৯ সালে আবু ধাবিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গেমসের স্পেশাল অলিম্পিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ দুটি স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্যপদক,দুটি চ্যাম্পিয়ান রানার্সআপ হয়। এবার ২০২৩ সালে জার্মানির বালিংনে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে ১৯০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি ইভেন্টে অংশ গ্রহণ করে তিনটিতেই প্রথম স্থান অর্জন করে ৩টি স্বর্ণপদক লাভ করেছে। যা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যাপক সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
তানাম পাবনা শহরের জাগির হোসেন একাডেমিতে ষষ্ঠ শেণিতে ভর্তি হয়ে পাবনা সুইমিং পুলে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে প্রথম স্থান অর্জন করে। পরে বিভাগীয় পযার্য়ে প্রথম পরে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে ওয়ার্ড গেমসের অলিম্পিকে অংশ গহণ করে ২০১৯ সালে। প্রথমেই সে স্বর্ণপদক পেয়ে দেশের পক্ষে চমক সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয়বারও ২০২৩ সালে অংশ গ্রহন করে স্বর্ণপদক লাভ করে আবার চমক সৃষ্টি করেছে। সে বর্তমানে জাগির হোসেন একাডেমিতে মানবিক বিভাগে ৯ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। তানাম স্বর্ণপদক নিয়ে স্কুলে ফিরলে স্কুলের সভাপতি, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান হয়।
তানামের পিতা হুমায়ুন কবির জানান, তার ছেলে জন্মের ৬ মাস পর থেকেই শ্রবণ শক্তি হারায়। এর পর তাকে নিয়ে সমাজে বেশ যন্ত্রণায় পড়তে হয়েছে। সমাজ আমার সন্তানকে নিয়ে চরম অবজ্ঞা করলেও আজ আমার সন্তান বিশ্ব জয় করেছে। এটা বড় সৌভাগ্য বলে মনে করি। তিনি তার লেখাপড়া চালিয়ে নিতে এবং তার একটা কর্ম সংস্থান করে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
জাগির হোসেন একাডেমির প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন মালিথা বলেন, তানাম আমাদের স্কুলের গর্ব। সে কথা বলতে না পারলেও তার হাতে লেখা খুবই সন্দর। শুধু সাঁতার নয় চিত্রাঙকনেও বিভাগে প্রথম হয়েছে। কম্পিউটার চালাতেও বেশ তার দক্ষতা রয়েছে। শুধু তার পরিচিতি এখন পাবনা নয় সারা বিশ্বে। আমরা তানামকে নিয়ে গর্ব করতে পারি।
জাগির হোসেন একাডেমির সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম খান বলেন, তানাম আমাদের গর্ব। একজন প্রতিবন্ধী সমাজের বোঝা নয় বরং সমাজের সম্পদ হয়ে পারে সেটা তানাম বুঝিয়ে দিয়েছে। তার সাফল্যে আমরা পাবনাবাসী গর্বিত। সরকার যদি পরিবারের পাশাপাশি এসব ছেলেদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তাদের ভবিষ্যতে এমন অর্জন আরও সহজ হবে। আমি তার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করি।
বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিকের পরিচালক ও পাবনা সাব—চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হোসেন বাদশা বলেন, এতো বড় অর্জন হয়তো পাবনাবাসী জানেই না। সরকারের পক্ষ থেকে তার একটা সংবর্ধনার আয়োজন করা উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারন এটা শুধু তার একার অর্জন নয় পাবনাবাসী তথা গোটা দেশের।