নন্দিত কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার যথাযোগ্য মর্যাদায় গাজীপুরে পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার গাজীপুরের সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের নুহাশপল্লীতে শ্রদ্ধা, ভালবাসার ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। এসময় হুমায়ুন আহমদকে স্মরণ করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনুমতি ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানান।
কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রয়াত এ লেখকের দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে গাজীপুরে হুমায়ূন আহমেদেও গড়া নূহাশ পল্লীতে আসেন। এদিকে হুমায়ুন আহমদের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে হুমায়ুন ভক্ত এবং হিমু পরিবহনের সদস্যরা নূহাশ পল্লীতে ভীড় জমাতে থাকেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা নূহাশ পল্লীর লিচু তলায় প্রয়াত হুমায়ুন আহমদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং কবর জিয়ারত করেন। এসময় প্রয়াত লেখকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এসময় গাজীপুর সদর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যন এডভোকেট রীনা পারভীন এবং নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ হুমায়ুন আহমদের শুনুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
কবর জিয়ারত শেষ মেহের আফরোজ শাওন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার দুই ছোট সন্তান অকালে তাদের পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে এই ব্যাপারটি আমাকে ভীষণ কষ্টতাড়িত করে। এসময় তিনি হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বলেন, হুমায়ুন আহমদ চলে গেছেন ১১ বছর। এখনো হুমায়ুন আহমেদের নাটক যদি ইউটিউব বা চ্যানেলে চলে আমরা শেষ না করে উঠতে পারিনা। হুয়ায়ুন আহমেদ কত বড়মাপের একজন লেখক, পরিচালক ও গীতিকার ছিলেন, কত বড়মাপের সৃষ্টিশীল সত্তা ছিলেন তার শূণ্যতা তার অনুপস্থিতে এখন অনুধাবন করা যায়। তবে খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য হুমায়ুন আহমদের বহু নাটক, ধারাবাহিক নাটক, এক পর্বের নাটক ও সিনেমা বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেলে কোন রকম চুক্তিপত্র ছাড়াই অনৈতিকভাবে তার সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শন করা হচ্ছে। হুমায়ুন আহমদ বেঁচে থাকতেও এসবের জন্য তারা অনুমতি নেয়নি, মৃত্যুর পরও তার উত্তরাধিকার কারোর সঙ্গে চুক্তি বা মৌখিক অনুমতিও নেয়নি। দেশের প্রথম সারিরসহ ওটিটি চ্যানেলগুলোতেও হুমাইয়ুন আহমেদের সৃষ্টি নাটকগুলোও চালানো হচ্ছে কোন প্রকার চুক্তি বা যোগাযোগ ছাড়া। আমি এসব চ্যানেলগুলোর নাম বলতে চাই না তারা লজ্জা পাবেন বলে। এটা হতে পারে না। এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ করেছি, কিন্তু অভিযোগের কোন জবাব আমি এখনও পাই নি। আমি আইনগতভাবে অভিযোগ করিনি, তবে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলাম। দেশের প্রথম সারির ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের একজনকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এখনও পর্যন্ত ওনাদের দিক থেকে কোন মুভমেন্ট বা নড়াচড়া আমি দেখতে পাই নি।
হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এসময় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনুমতি ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানান।
নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহমদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে সকাল থেকে কোরানখানির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বিভিন্ন মাদ্রাসার আড়াই শতাধিক এতিম ছাত্রদের নিয়ে এ কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়ার অনুষ্ঠাণ হয়। পরে এতিমদের প্লেটে হুমায়ূন আহমেদের পছন্দের খাবার তুলে দেন শাওন ও তার দুই ছেলে। দুপুরে সাদা ভাত, গরু ও মুরগীর মাংস, সব্জি, ডাল এবং মিষ্টি খেতে দেয়া হয়। এছাড়াও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ উপস্থিত হুমায়ুন ভক্তদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন ভক্তদের আগমন অব্যহত ছিল।
জনপ্রিয় এ লেখক হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তাঁর ডাক নাম কাজল। তাঁর বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটো ভাই। সবার ছোটো ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। ২০১১সালে হুমায়ুন আহমেদের অন্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরের বছরের মাঝামাঝি সময় তার অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ইন্ফেকশন হয়ে ২০১২সালের ১৯জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমেরিকায় নিউইর্য়কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদকে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত গাজীপুরের নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় এই উপন্যাসিকের বিচরণ ছিল নাটক-চলচ্চিত্রেও। ১৯৭১সনে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা তাকে হত্যার জন্য গুলি ছুড়লেও অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান তিনি। হুমায়ুন আহমেদ শুধু সাহিত্য রচনা করেননি। তিনি নাটক ও সিনেমায় এ সাহিত্য রূপ দিয়েছিলেন। তার প্রথম টিভি নাটক “এইসব দিনরাত্রি” বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা, জননীর গল্প প্রভৃতি।