আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন তা ইসির কাছে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। এছাড়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সক্ষম কিনা সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো এবং ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চায় প্রতিনিধি দলটি।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইইউ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে ইসির কাছে। ভোটার সংখ্যা কতজন, নারী ও পুরুষ ভোটার কত, সিসিটিভি স্থাপন এবং পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।

তিনি জানান, তারা যা যা জানতে চেয়েছেন তা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে দুই পক্ষের টেকনিক্যাল টিমের সমন্বয়ে আরও একটি বৈঠক হবে।

অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইইউ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের একটি টেকনিক্যাল টিম ১৮-১৯ জুলাই ইসির সঙ্গে পরবর্তী বৈঠক করবে। ইসি ভবনে ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (আইন) এবং যুগ্ম সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ১ ও ২) এই তিনজন অংশ নেবেন।

আগামী নির্বাচনে কতজন পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে এবং পর্যবেক্ষক পাঠাতে আবেদনের সময়সীমাও জানতে চেয়েছে দলটি। জবাবে ইসি জানিয়েছে, যতজন ইচ্ছা পর্যবেক্ষক তারা পাঠাতে পারে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করলে সুবিধা হয়।

ইসি জানিয়েছে, তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯১১টা নির্বাচন আয়োজন করেছে। সেসব নির্বাচন নিয়ে তারা সন্তুষ্টু।

বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিন ধারাবাহিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। বৈঠকগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া, নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ইইউ প্রতিনিধি দল নিশ্চিত হতে চায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতা মুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হবে। যার ওপর নির্ভর করবে সংস্থাটির পর্যবেক্ষক দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসবে কি না।

সোমবার দিনের শুরুতে সফররত ইইউ প্রতিনিধি দল সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন অনুবিভাগে মিশন মহাপরিদর্শক (আইজিএম) আসাদ আলম সিয়ামের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান ইওনাউ দিমিত্রার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন। এ সময়ে ইইউর ঢাকা দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সকাল ১১টার দিকে মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করতে কমিশনে যায় ইইউ প্রতিনিধি দল। এ বৈঠকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা অংশ নেন। এরপর দুপুর ১টার দিকে ইইউ প্রতিনিধি দলটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর মধ্যাহ্নভোজের বিরতি দিয়ে ইইউ প্রতিনিধি দলটি পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর বিকেলে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউ প্রতিনিধি দলটি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ইইউ প্রতিনিধি দলটি মূলত নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি দাঁড়াতে পারে তা মূল্যায়ন করছে। কারণ নির্বাচনের সময় সংস্থাটির প্রতিনিধি দল আসবে, ফলে তাদের নিরাপত্তাটি অগ্রাধিকারে রয়েছে। সফরের প্রথম দিন সমমনা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূ, হাইকমিশনার ও প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তারে অভিজ্ঞতা জেনেছে প্রতিনিধি দলটি। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি ও সহিংসতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, ভয় ভীতি দেখানো, হুমকিসহ পুলিশ প্রসাশন ব্যবহার করে বিরোধী দল দমন, নাগরিকদের ভোটাধিকার, মানবাধিকার রক্ষার মতো বিষয়গুলো প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণে থাকছে। এ বিষয়গুলোসহ সার্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সমমনা দেশগুলোর থেকে ব্রিফ নিয়েছে পর্যবেক্ষক দল।

এর সঙ্গে তারা বোঝার চেষ্টা করেছেন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কি না। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়ার আভাস পেলে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইইউ। এ জন্য নির্বাচনের প্রক্রিয়াও জানার চেষ্টা করেছেন। যা থেকে মূলত আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিসংতা মুক্ত নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাবে।