ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দু’দিন ব্যাপী ‘নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং, আইওটি অ্যান্ড মেশিন লার্নিং (এনসিআইএম ২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সম্পন্ন হয়েছে। ডুয়েট’র কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (সিএসই) আয়োজিত দু’দিন ব্যাপী এ কনফারেন্সের শেষদিন শনিবার রাতে ঢাকার একটি হোটেলে সমাপনী অনুষ্ঠাণ অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান বলেন, কর্মশক্তির দক্ষতা, জ্ঞান এবং মেধা যেকোনো জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের চালিকা শক্তি। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এসব বিষয়ের উপর এমনভাবে প্রভাব ফেলে অগ্রসর হচ্ছে, যা ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানÑএমনকি সমন্বিত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য শক্তি বিন্যাসের মাত্রাও ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে মানব জাতির জীবন যাপন, কাজ এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা একটি নতুনমাত্রা দেখতে পাচ্ছি। ফলে আগামী কয়েক বছর অর্থনীতি এবং শিল্পসহ সকল ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। এজন্য উৎকর্ষতা সাধনের এই দ্বারপ্রান্তে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর বেশি বেশি গবেষণা ও আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞানকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, মানবজাতির টিকে থাকার অন্যতম চালিকশক্তি হলো নৈতিকতা ও মূল্যবোধ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ বা ব্রত নিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেই আদর্শ তথা সোনার বাংলা গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে হলে তাঁর আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলকে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের আহবান জানান।

কনফারেন্সের পৃষ্ঠপোষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ গবেষণা ও উদ্ভাবনে শিক্ষক-বিজ্ঞানীদের আরো উৎসাহী হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আমি মনেকরি ‘রূপকল্প ২০৪১’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের মানসম্পন্ন গবেষণা সম্পাদনে সহায়তা ও উৎসাহিত করতে এ কনফারেন্সে উত্থাপিত চিন্তাভাবনাগুলো শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরিসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কনফারেন্সের জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং অরগানাইজিং সেক্রেটারি ও সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড.রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ড. ফজলুল হাসান সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে কনফারেন্সের অরগানাইজিং চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম উপস্থিত ছিলেন। এসময় কনফারেন্সটিতে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থাপনা ও কাজের ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে সেরাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।

‘রূপকল্প ২০৪১’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের মানসম্পন্ন গবেষণা সম্পাদনে সহায়তা ও উৎসাহিত করতে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের স্পন্সর হিসেবে ছিল ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর এবং এটুআই (ধ২র)। টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর হিসেবে ছিল ‘আই-ইইই’ ও ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি’এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট হিসেবে ছিল ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার’। এছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ‘চ্যানেল ২৪’ ও প্রিন্ট মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’।

দুইদিন ব্যাপী এই কনফারেন্সে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, মালয়েশিয়া, স্পেন, ইন্ডিয়া, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ কোরিয়া সহ ১১ টি দেশ থেকে ২শ’ জনের অধিক গবেষক অংশগ্রহণ করেন। এ কনফারেন্সে ৮৪ টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এটিই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স।