গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় ঝুট ব্যবসার দখল নিতে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার ও গুলির ঘটনায় শনিবার রাতে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গাজীপুরের র্শীষ সন্ত্রাসী ১৯ মামলার আসামী রফিকুল ইসলাম শাহীন ওরফে ব্ল্যাক শাহীন (৩৪) ও মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার ছেলেসহ ৯জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ব্ল্যাক শাহীনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও এক রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. মহিউদ্দিন বিপ্লব (২৬), সাকিবুল হাসান (২২), রাকিব উদ্দিন(১৮), মো. শাহজাহান (২৭), রায়হান মাহমুদ (২৭), মনির হোসেন (২৮), খায়রুল ইসলাম (২৭) ও হৃদয় হোসেন (১৮)। এদের মধ্যে মহিউদ্দিন বিপ্লব গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সদর মেট্রো থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ওয়াজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রেজওয়ান আহমেদ জানান, গত ১৬ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকায় নেক্সট এক্সপোর্ট জোন ফ্যাক্টরির সামনে ঝুট নিয়ে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলি হয়। এসময় আতিকুর রহমানের কোমরে ও শাহাদত নামের একব্যক্তি পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় আহত শাহাদত হোসেনের মা কারিমুন বাদী হয়ে শনিবার রাতে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫-১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্ল্যাক শাহীনসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে। পরে ব্ল্যাক শাহীনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছোট দেওড়া এলাকায় তার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার অফিসের কক্ষের সোফার নীচ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও এক রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর আদাবৈ পেয়ারাবাগান এলাকায় নেক্সট এক্সপোর্ট জোন লিমিটেড নামের পোশাক তৈরির একটি কারখানা রয়েছে। ওই কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুট ব্যবসা করে আসছেন মোস্তফা কামাল নামের আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। শুক্রবার দুপুরে ওই কারখানার ঝুট মালামাল বের করতে গেলে একদল যুবক তাদের বাধা দেয়। ঝুট ব্যবসা দখলে নিতে তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় এবং এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে পরপর কয়েকটি গুলি ছোড়ে। এসময় আতিকুর রহমান ও শাহাদত নামে দু’জন গুলিবিন্ধ হন।

ঝুট ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশেই নেক্সট এক্সপোর্ট জোন লিমিটেড নামের কারখানা। ওই কারখানা নির্মাণ করার সময় আমাদের সঙ্গে চুক্তি হয়, কারখানার ঝুট ব্যবসা আমার বাবা করবেন। সেই থেকেই ব্যবসাটি আমরা করে যাচ্ছি।’

ইয়াছিন আরো বলেন, ওই ব্যবসাটির দখল নিতে স্থানীয় শাহীন ওরফে ব্ল্যাক শাহীন ও বিপ্লবের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন যুবক শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আমাদের বাড়ির আশপাশে ওৎপেতে থাকে ও মহড়া দেয়। দুপুর ১২টার দিকে তারা আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে তারা চায়নিজ কুড়াল, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত শাহীনের নামে গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, চাঁদাবাজী, মাদক, ধর্ষণ, খুন ও অস্ত্র মামলা সহ মোট ১৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলায় সে চার্জশিটভূক্ত আসামী বলে পুলিশ জানিয়েছে।