ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের উপর হামলার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় হামলাকারীর বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় প্রায় এক ঘন্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এতে দীর্ঘ যানজটের ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। পরে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। এ ঘটনার ‘পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন’ উল্লেখ করে পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার বরবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ড. মোস্তাফিজ। এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইবি শিক্ষক সমিতি ও জিয়া পরিষদ। একইসাথে এ ঘটনার বিচার চেয়ে আল-হাদিস বিভাগের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ব্যাংকের ইবি শাখার ম্যানেজার বরাবর আবেদন জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর বরাবর পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে লিখিত দেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীকে গ্রেফতার না করলে শুক্রবার আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করবো। এদিকে ঘন্টাব্যাপী অবরোধের ফলে কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা।
দায়িত্বরত প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত। এরকম ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের জন্য অপমানজনক। আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের দাবিগুলো আমরা লিখিত আকারে চেয়েছি। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিষয়টির সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন স্থগিত করে।
এদিকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইবি শিক্ষক সমিতি ও জিয়া পরিষদ। একইসাথে তারা হামলাকারীকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার বিচার চেয়ে আল-হাদিস বিভাগের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ব্যাংকের ইবি শাখার ম্যানেজারের মাধ্যমে চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন জমা দিয়েছেন। তারাও হামলাকারীর অনতিবিলম্বে শাস্তি দাবি করেন। এদিকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলামের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে লিখিত দিয়েছে। তাদের দাবিগুলো হলো- অপরাধীকে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের ইবি শাখা বন্ধ থাকবে, অভিযুক্তকে ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, কর্র্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করলে আবারো অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থিত সকল শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার সকাল পৌঁণে ৬টার দিকে হাটতে বের হলে ইবি শিক্ষক ড. মোস্তাফিজের উপর অতর্কিত হামলা চালান তারই প্রতিবেশী এক ব্যাংক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া জেলার চৌড়হাস ব্রাঞ্চে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তারা উভয়েই হাউজিং ডি বøক এলাকায় বসবাস করেন। এ ঘটনায় ‘পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন’ উল্লেখ করে পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার বরবার তিনটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ড. মোস্তাফিজ।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে অনেকের সাথে কথা বলেছি। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযোগ পত্র সূত্রে, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে হাঁটার সময় কুষ্টিয়া কৃষি কলেজের সামনে আসলে তার প্রতিবেশী সোহেল মাহমুদ তাকে দেখা মাত্রই অতর্কিত হামলা চালায় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেলের উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও লাথিতে বাম হাতের আঙুলে মারত্মক আঘাত পান তিনি। এছাড়াও তাকে পরিবার সহ শহর ছাড়তে এবং অন্যথায় প্রাণ নাশের হুমকি দেন ওই কর্মকর্তা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
ভুক্তভোগী ড. মোস্তাফিজ বলেন, আমি সমিতির সেক্রেটারি থাকাকালীন চৌড়হাস শাখার ডিজিএম (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার) এর কাছে একদিন গল্পের ছলে ওই কর্মকতাকে (সোহেল) চেনেন কিনা জানতে চাই। আমি বলেছিলাম, উনি আমাদের বিল্ডিংয়ের কাজে মাঝে মাঝে জ্বালাতন করে, তবে কিছু বলার দরকার নেই। পরে হয়তো ডিজিএম সাহেব তাকে কিছু বলেছে এবং এটাকে সে থ্রেট হিসেবে নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, শুনেছি সোহেল অনেকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে, এমনকি বিভিন্ন সময় মারধরও করেছে। ব্যাংকের স্টাফদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়। তার এমন আচরণে আমরা ব্যাংক কর্মকর্তারাও মর্মাহত। ব্যাংকের মত আস্থাসম্পন্ন জায়গায় চাকরি করে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমরাও চাই তার দৃষ্টান্তমূলক শান্তি হোক। যাতে করে কেউ যেন আর এমন কাজ করার সাহস না পায়।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল মাহমুদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তার সাথে আমার বিরোধ ছিলো। তিনি আমার অফিসের ডিজিএম’র কাছে আমার নামে নানা অভিযোগ করেছে। কিন্তু আমি মারধরের ঘটনার সাথে জড়িত নই। তার সাথে আমার গত ১০ দিন ধরে দেখাই হয়নি। তিনি আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ভুক্তভোগীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক কুষ্টিয়ার হাউজিংয়ের ডি বøকে বাড়ির নির্মান কাজ শুরু করলে বাধা দেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল মাহমুদ। পরে তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভায় অভিযোগ করলে সার্ভেয়ার এসে বিষয়টির মীমাংসা করে দেন। কিন্তু এর পরে কাজ শুরু করলে আবারো ওই শিক্ষকদের হুমকি দিতে থাকেন তিনি। গত বছরের জুলাই মাসে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল বারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপক।
আবির হোসেন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি