গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্বামীকে মারধর কওে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে তার গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রী। এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে স্ত্রীকে খুন করেছে তার স্বামী। প্রায় ৯মাস পর এঘটনায় জড়িত নিহতের স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শনিবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত মো. মাসুদ রানা (৩৭) নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানার উত্তর রাজাপুর গ্রামের মো. ফিরোজ সাকিদারের ছেলে। স্ত্রী বুলবুলি বেগম (৩৪) নওগাঁর মহাদেবপুর থানার বামনসাতা গ্রামের আয় বাবুর মেয়ে।
পিবিআই এর পুলিশ সুপার মাকছুদের রহমান জানান, প্রেমের সম্পর্কের জেরে প্রায় সাত বছর আগে সমন্ধীর স্ত্রী বুলবুলি বেগমকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন মাসুদ রানা। বিয়ের পর স্ত্রী বুলবুলিকে নিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার দেওয়ালিয়াবাড়ী কলেজ গেইট এলাকার মিজান এর বাড়ীতে ভাড়া বাসায় থাকতেন মাসুদ রানা। বুলবুলি স্থানীয় এক গার্মেন্টর্সে হেলপার হিসেবে কাজ করতেন এবং তার স্বামী মাসুদ এলাকায় রিক্সা চালাতেন। স্ত্রী বুলবুলি প্রায়ই মোবাইলে বাইরের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতেন। এতে স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে বলে স্বামী মাসুদের সন্দেহ হয়। এনিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে তাদের দু’জনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল।
তিনি জানান, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কাজ শেষে রাতে বাসায় ফিরে আসলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়। একপর্যায়ে স্বামী মাসুদকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় স্ত্রী বুলবুলি। এ অপমান সইতে না পেরে পরদিন সকালে বুলবুলিকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ^াসরোধে হত্যা করে মাসুদ। পরে স্ত্রীর লাশ ঘরে রেখে দরজায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায় মাসুদ। পালিয়ে যাওয়ার সময় বুলবুলিকে হত্যা করার ঘটনা জানিয়ে মেজো বোন আছিয়া আক্তার টপিকে ফোন করে দ্রুত রুমে যেতে বলে সে। এ খবর পেয়ে বুলবুলির বোন টপি দ্রুত ওই বাসায় গিয়ে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে রুমের মেঝেতে গলায় ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় বুলবুলির লাশ দেখেন। তারা নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
তিনি আরো জানান, থানা পুলিশ তদন্তকালে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই গাজীপুরকে দেওয়া হয়। এরপ্রেক্ষিতে পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জামাল উদ্দিন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টঙ্গী পূর্ব থানার আরিচপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিহতের স্বামী মাসুদ রানাকে শুক্রবার বিকেলে (২৫ মে) গ্রেফতার করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে শনিবার আদালতে সোপর্দ করা হলে ভিকটিম বুলবুলি বেগম হত্যাকান্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে মাসুদ। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় ৯মাস পর চাঞ্চল্যকর বুলবুলি হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।