রাশিয়ার সীমান্ত শহর বেলগোরদে প্রবেশ করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। রুশ বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৪ ঘণ্টা আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলে। এত ৭০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় বাহিনী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া।
বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া বলছে যেসব ‘হামলাকারী’ বিদ্রোহী ইউক্রেন থেকে সীমান্ত পার হয়ে বেলগোরদ অঞ্চলে হামলা চালিয়েছিল তাদের পরাস্ত করা হয়েছে।
তাদের সাতে রুশ বাহিনীর দুদিন ধরে যুদ্ধ চলার পর রাশিয়া দাবি করছে যে বহু হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং বাকিরা ইউক্রেনে পালিয়ে গেছে।
কিন্তু ইউক্রেন বলছে এই যোদ্ধারা ক্রেমলিনবিরোধী দুটো আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে যে- তাদের বাহিনী ৭০ জন হামলাকারীকে হত্যা করেছে এবং বাকিদের সীমান্তের ওপারে ইউক্রেনে ফেরত যেতে বাধ্য করেছে।
মস্কো বলছে, হামলাকারীরা ইউক্রেনীয়।
কিন্তু রাশিয়ার দুটো আধাসামরিক বাহিনী দাবি করছে, তারা এই আক্রমণ পরিচালনা করেছে। তারা বলছে, মস্কোতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকারকে উৎখাতের জন্যই তাদের এই হামলা।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন ‘নাশকতা’ করার জন্য সশস্ত্র একটি ইউক্রেনীয় বাহিনী সীমান্ত পার হয়ে সোমবার সীমান্তবর্তী গ্রাভোরনোস্কির ওপর হামলা চালায়।
এই হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার দুটো আধাসামরিক বাহিনীর রুশ নাগরিকরাই এই আক্রমণ চালিয়েছে।
এই ঘটনায় রাশিয়া সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই হামলার বিষয়ে টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, হামলাকারীদের রুশ বাহিনী ‘আটকে দিয়েছে এবং পরাজিত করেছে’ এবং তাতে ৭০ জনেরও বেশি ‘ইউক্রেনীয় সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
ওই অঞ্চলের গভর্নর ভাচেস্লাভ গ্লাদকভ বলেছেন, হামলায় যেসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলো গুলি করে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এতে কিছু ভবনের ক্ষতি হয়েছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার ১৫ মাসের মধ্যে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রাশিয়ার ওপর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা।
হামলার পর পরই মস্কো বেলগোরদ অঞ্চলে সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান চালাতে শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসেবে যোগাযোগ ও চলাচলেরে ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন এই হামলার পেছনে যারা ছিল তারা লিবার্টি অব রাশা লিজান এবং রাশান ভলান্টিয়ার কোর এই দুটো গ্রুপের সদস্য।
লিবার্টি অব রাশা লিজান ইউক্রেনভিত্তিক রুশ মিলিশিয়াদের একটি গ্রুপ। গ্রুপটি বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে তারা রাশিয়ার ভেতরে তৎপর রয়েছে।
সোমবার টুইটারে এক পোস্টে গ্রুপটি দাবি করেছে যে- তারা সীমান্তবর্তী কজিঙ্কা শহরটি ‘সম্পূর্ণ মুক্ত’ করেছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছে এই যোদ্ধারা ইউক্রেনীয়দের জন্য একটি ‘নিরাপত্তা এলাকা’ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিল।
এই দুটো বাহিনীকে এর আগে আন্তর্জাতিক বাহিনী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যারা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার সাথে যুক্ত রয়েছে।
কিয়েভের গোয়েন্দা দফতরের আন্দ্রি ইওসোভ বলেছেন, এই দুটো গ্রুপ ‘রুশ ভূখণ্ডের ভেতরে স্বাধীনভাবে কাজ করছে’ এবং এদের সাথে ইউক্রেনীয়রা জড়িত নয়। ইউক্রেনীয় টিভিতে তাদেরকে মিলিশিয়া এবং ‘রুশ স্বেচ্ছাসেবী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাশান ভলান্টিয়ার কোর বা আরডিকে আলোচনায় আসে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে যখন তারা সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার ব্রিয়ান্সক অঞ্চলে হামলা চালায়। ওই হামলায় ৪৫ জন অংশ নিয়েছিল বলে তারা দাবি করে।
এই গ্রুপের নেতা ডেনিস কাপুস্তিন অথবা ডেনিস নিকিতিন নামে পরিচিত। তিনি একজন রুশ জাতীয়তাবাদী। এই গ্রুপটি প্রকাশ্যে এক জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনে অনেক জাতিগত রুশ বসবাস করলেও…তারা ইউক্রেনীয় উগ্রবাদী।
পেসকভ বলেন, তাদের এই আক্রমণের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুত থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া।
কয়েক মাস ধরে তীব্র লড়াইয়ের পর রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ সম্প্রতি দাবি করেছে যে তারা বাখমুত শহর পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে।
তবে কিয়েভ বলছে যে শহরের কিছু অংশ এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার মঙ্গলবার বলেছেন, বাখমুতে যুদ্ধের তীব্রতা কমে গেছে, যদিও শহরের আশেপাশে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র : আল-জাজিরা ও বিবিসি