আর মাত্র ১দিন পর বৃহষ্পতিবার (২৫ মে) ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ না নিলেও এ নির্বাচনের দিকে শুধু এ নগরবাসী নয়, পুরো জেলাসহ সারা দেশ এমনকি বিশ্ব তাকিয়ে আছে। প্রায় ১২ লাখ ভোটার এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইভিএম মেশিনে ভোট প্রদান করবেন। নির্বাচিত করবেন তাদের জনপ্রতিনিধি মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর। মঙ্গলবার ছিল নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার শেষ দিন। এদিন মধ্যরাত থেকে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারনা শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু ভোট প্রদান ও ভোট গ্রহনের। প্রায় ৪০ লাখ নগরবাসীর সেবা করার জন্য কারা হচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এটাই নির্ধারন হবে বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে। ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শেষ মুহুর্তে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও হিসেব নিকেশ কষে ভোটারদের পিছু নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটেছেন ভোটারদের সমর্থন পেতে। তারা প্রতি মুহুর্তকে কাজে লাগাতে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছেন এদিন। সবার একটাই উদ্দেশ্য-নির্বাচনে জয়ী হওয়া। এ নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় সংসদসহ আগামি নির্বাচনগুলোতে অনেকটা প্রভাব ফেলবে এমন ধারনায় এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন প্রতিদিন ভিড় জমিয়েছেন গাজীপুরে। তবে প্রচারণার শেষ মুহুর্তে নির্বাচনের হিসেব পাল্টে গেছে। গত ৫ বছরে রাস্তা-ড্রেনেজ সিস্টেমসহ এলাকার তেমন কোন উন্নয়ন না হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ভোটারদের সামনে। তাই প্রার্থী নির্বাচনে ভোটারেরা এবার নানা বিষয় বিবেচনা করে তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ মোট ৮জন প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও সবার দৃষ্টিই এখন প্রধান প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর দিকে। মূলতঃ নির্বাচনে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে অন্য মেয়র প্রার্থীদের। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এড. আজমত উল্লা খান গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি। তিনি সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র/চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগের এ মেয়র প্রার্থী নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার জন্য তার ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিকে প্রধান্য দিয়ে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন আওয়ামীলীগের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এ স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরীর উন্নয়নে তার ছেলের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগর উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচনে এ দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন’র প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতার ছেলে শাহনূর ইসলাম রনি। আগামি ২৫মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর এ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত তৃতীয় মেয়র হিসেবে কে বিজয়ের হাসি হাসবেন, তা দেখার জন্য সবাই আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন। এছাড়াও এ নির্বাচনে ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আসনে ৭৮ জন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদের ২৪৩ জন সহ মোট মোট ৩২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন ॥
এদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের রিটানিয় অফিসার ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমারা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
রিটানিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার সদস্য নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনে একজন মেয়র, ৫৭টি সাধারন ওয়ার্ডে ৫৭ জন সাধারন কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৯ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হবে। অবশ্য এদের মধ্যে একজন সাধারন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকার ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪শ ৯৭টি ভোট কক্ষ থাকবে। সিটি কর্পোরেশনের ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪শ ৬৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭শ ৪৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬শ ৯৮ এবং ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে। নির্বাচনে ১০ হাজার ৯শ ৭১ জন ভোট গ্রহন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ৪শ ৮০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪শ ৯৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৬ হাজার ৯শ ৯৪ জন পোলিং অফিসার। সিটি এলাকার ৩শ ৩৩টি প্রতিষ্ঠানে ৪শ ৮০টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য নির্ধারন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪টি প্রতিষ্ঠানে ২টি করে ভোট কেন্দ্র, ১৬টি প্রতিষ্টানে ৩টি করে ভোটকেন্দ্র, ৯টি প্রতিষ্ঠানে ৪টি করে ভোটকেন্দ্র এবং একটি প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র থাকছে।
সাধারন ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী একজন এসআই বা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, একজন অস্ত্রধারী অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন এপিসি (অস্ত্রধারী) এবং ১০ জন আনসার বা ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে এদের সাথে আরো একজন কনস্টেবলসহ মোট ১৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স সিটির প্রতিটি সাধারন ওয়ার্ডে একটি, প্রতি তিনটি সাধারন ওয়ার্ডে স্ট্রাইকিং ফোর্স একটি এবং মহানগরের ৮টি থানায় একটি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এছাড়া প্রতি দুইটি সাধারন ওয়ার্ডে একটি করে টীমসহ র্যাবের মোট ৩০টি টীম, ৫টি সাধারন ওয়ার্ডে এক প্লাটুন হিসেবে বিজিবির ১৩ প্লাটুন সদস্য এবং প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একজন করে মোট ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তরা আসতে শুরু করেছেন গাজীপুরে । ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটগ্রহনের পূর্বের দুইদিন (মঙ্গলবার থেকে), ভোটগ্রহনের দিন এবং ভোটগ্রহনের পরের দুইদিন (২৭মে) পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে ॥
আগামী ২৫ মে (বৃহষ্পতিবার) অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচন। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস সূত্র আরো জানায়, এবারই প্রথম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সব কেন্দ্রের ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। বুধবার থেকে (২৪ মে) মহানগরীর ৫টি ভেন্যু হতে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম ৪৮০টি কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে। মহানগরের চৌরাস্তা এলাকার চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ও পশ্চিম চান্দনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১,২,৩,৪ ও ৬ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ১ হতে ১২ এবং ১৬ থেকে ১৮ নং ওয়ার্ড, জেলা শহরের দারুসসালাম (গুরস্থান) ফাজিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৫,১০ ও ১১ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ১৩ হথে ১৫ এবং ২৮ হতে ৩৩নং ওয়ার্ড, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ১৯ হতে ২৭ নং ওয়ার্ড, ধীরাশ্রমের গিরিজা কিশোর (জিকে) আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও ধীরাশ্রম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১৩,১৪,১৫ ও ১৬ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ৩৭ হতে ৪৮ নং ওয়ার্ড এবং বোর্ডবাজারের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১২, ১৭,১৮ ও ১৯নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ৩৪ হতে ৩৬ ও ৪৯ থেকে ৫৭ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরন করা হবে।
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ॥
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করেছে পুলিশ। তবে প্রতিবন্ধি ভোটারদের সহযোগিতায় নিয়োজিত গাড়ির ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ মে) গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য ২৪ মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৫ মে রাত ১২টা পর্যন্ত যে কোনো ধরনের ভারী যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। এছাড়াও ২৩ মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৬ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয় পত্র থাকা সাপেক্ষে), আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যসহ নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
এছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় ২৩ মে ভোর ৬টা থেকে ২৭ মে দিবাগত মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন (লাইসেন্সধারী), বিস্ফোরক/ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার, অস্ত্র-শস্ত্র, তলোয়োর, বর্শা, বন্দুক, দা, ছোরা, কাঁচি, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রার্থীদের গণসংযোগ ॥
আওয়ামীলীগ প্রার্থীর গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) এড. আজমত উল্লা খান নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিন মঙ্গলবার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠণের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরাসহ আশেপাশে এলাকার নেতা কর্মীরাও এ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ॥ টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিন মঙ্গলবারেও তিনি ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর গাছা, কুনিয়া ও তারগাছসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন ও ভোটারদের কাছে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট প্রার্থণা করেন। এরআগে তিনি নগরীর ছয়দানা এলাকায় তার বাসায় ৯দফা সম্বলিত নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
জাপা প্রার্থী ॥ জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) এদিন মহানগরীর গাছা থানা এলাকা হতে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি কর্মী সমর্থকদের নিয়ে খাইলকৈর, হাজী মার্কেট, ডেগেরচালা, হারিকেন রোড, সাইনবোর্ডে, বোর্ডবাজার, বগারটেক, বড়বাড়ি, কামারজুরি সহ আশেপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে তিনি সদর থানার বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন
স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি ॥ এদিকে হাতি প্রতীক নিয়ে অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি মঙ্গলবার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে অপর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া কড়ই তলা বস্তি এলাকায় তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা দেয়। বাধাঁদানকারীরা তাকেসহ তার কর্মী সমর্থকদের ঘেরাও করে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার হুমকি দিলে তিনি ওই এলাকা ত্যাগ করেন। ঘটনাটি রিটার্ণিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি। গণসংযোগকালে তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এরআগে সকালে তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাত পাখা) কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর টঙ্গী পূর্ব, টঙ্গী পশ্চিম, পূবাইল, সদর মেট্রো, বাসন, গাছা, কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি থানার বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা সফর করে গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
এবার ভোটার বেড়েছে ১০.৭৮শতাংশ ॥
পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বৃদ্ধির হার ৫.৭৭% বেশি ॥
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে ১০.৭৮ শতাংশ। এবারের নবীন ভোটারদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বৃদ্ধির হার শতকরা ৫.৭৭ ভাগ। ফলে এবার প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নবীন তথা নারী ভোটাররাই একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এবার নির্বাচনে গত নির্বাচনের চেয়ে ভোটার বেড়েছে ৪১ হাজার ৭৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২২ হাজার ৮২৭ এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ১৮হাজার ৮৯৫। এছাড়াও হিজড়া ভোটার ১৮ জন রয়েছেন।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সিটি নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান জানান, সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী এবারের সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। ২০১৮ সালে গাসিক এর নির্বাচনকালে একই এলাকার মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১১লাখ ৩৭হাজার ৭৩৬। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫লাখ ৬৭হাজার ৮০১জন। এর আগে ২০১৩ সালে গাসিক এর প্রথম নির্বাচনকালে ওই এলাকার মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৭ জন এবং নারী ভোটার ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৬১ জন।
ফলে এ তথ্য থেকে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মোট পুরুষ ভোটার সংখ্যার চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা কম। তবে গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার বেশি বেড়েছে এবং এ বৃদ্ধির হার হলো ৫.৭৭%। তবে সামগ্রিক ভোটার বৃদ্ধির হার হলো ১০.৭৮%। এজন্য ভোটার কেন্দ্র এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাসহ আনুষাঙ্গিক জনবলও বাড়ানো হয়েছে। গত নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ছিল ৪২৫টি, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৪৮০টি। এছাড়া ভোট কক্ষ বেড়ে হয়েছে ৩,৪৯৭টি। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, এ নির্বাচনে সূষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রতি ভোট কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও প্রতি ভোট কক্ষে একজন করে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও দুইজন করে পোলিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন। নগরীর ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণের জন্য মোট ৪৮০জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩,৪৯৭ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও ৬৯৯৪ জন পোলিং অফিসারকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত আরো শতকরা ৫ ভাগ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতির জন্য। ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ছাড়াও প্রার্থীদের এজেন্ট থাকতে পারবেন।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আগামী ২৫ মে (বৃহষ্পতিবার) অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচন। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ সিটি কর্পোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি। নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য মোট ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি, এরমধ্যে ৪৯১ টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ (যদি থাকে) থাকবে।
গাজীপুর আদালতের সাবেক এপিপি মো. আসাদুল্লাহ বাদল বলেন, পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি বৃদ্ধির তিন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে নারীদের চেয়ে পুরুষ মৃত্যুর হার বেশি। জেলায় নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি প্রবাসী থাকায় তাদের অনেকেই ভোটার হননি। তৃতীয় কারণ হলো শিল্প কারখানা অধ্যূষিত গাজীপুরে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ গাজীপুরের শিল্প কলকারখানায় চাকুরি করছেন। তাদের মধ্যে ৮০শতাংশই হলো নারী শ্রমিক। যাদের অধিকাংশ এখানে ভোটার হয়েছেন। আর এ নব্য তথা নারী ভোটাররাই হলো এবারের নির্বাচনে প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের একটা বড় ফ্যাক্টর।
নারী উদ্যোক্তাদের বিনাসুদে ঋণ প্রদাণসহ
৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা জায়েদার ॥
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারলে আগামী ৫বছরের জন্য নগরবাসীর হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, নারী উদ্যোক্তাদের বিনা সুদে ঋণ, আউটার রিং রোড নির্মাণ, পর্যাপ্ত সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ, যাতায়াতের একাধিক বিকল্প রাস্তা তৈরী, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ফ্লাইওভার, ইউপাশ, ইউলুপ নির্মাণ, নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ফুট ওভার, জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, বর্জ্যে ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধানের কথা জানিয়ে ৯দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের ছয়দানায় তার নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ইশতেহার পেশ করেন। তিনি তার ইশতেহারে ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণিত মাষ্টার প্লান অনুযায়ী তার সকল অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করব । তিনি বলেন, আপনারা বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমার পুত্র জাহাঙ্গীর আলমকে ভালোবেসে সর্বোচ্চ ভোটে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হয়েই আমার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম তার নিরলস পরিশ্রম এবং মেধা দিয়ে মাত্র ৩৮ মাসে উন্নয়নের মাধ্যমে গাজীপুরের চিত্রই পরিবর্তন করে দিয়েছিল । আপনাদের নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের উন্নয়নের জন্য প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘন্টা নিরলস ভাবে কাজ করেছে। মাত্র ৩৮ মাসে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মান করে স্বাধীনতার পর গাজীপুরের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছে। কিন্ত জাহাঙ্গীর আলম মাদক, সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় গাজীপুরের কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী, জনসমর্থনহীন কিছু ব্যাক্তি নানামুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং বিপুল পরিমান কালো টাকা খরচ করে অপপ্রচার চালিয়ে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রথমে দল এবং পরবর্তিতে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তিনি সিটি কর্পোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নায়নসহ আগামী ৫ বছরের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষনা দেন। এছাড়া নগরীর উন্নয়নে অত্যাধুনিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্টা, অত্যাধুনিক মার্কেট নির্মান, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপসহ ৯ দফা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এসময় তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার সঙ্গে ছিলেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচন আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য মোট ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি, এরমধ্যে ৪৯১ টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ (যদি থাকে) থাকবে। এ সিটি কর্পোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি। গত ৫ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন।
মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর ও নুরুল ইসলাম, টঙ্গী ॥