গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খান। ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি নগরীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরো শক্তিশালী করে সেবার মানকে সুনিশ্চিত করতে এক বছর, দুই বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদি তিন স্তর বিশিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের অঙ্গিকার করেছেন।
রবিবার (২১ মে) শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি রোডের প্রকৌশল ভবনের ৬ষ্ঠ তলার কনফারেন্স কক্ষে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহার ঘোষনাকালে এডভোকেট আজমত উল্লা খান অতীতের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও অদক্ষতার কারনে কাংখিত উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া সঠিক নেতৃত্ব, পরিকল্পনা, সততা ও স্বচ্ছতার অভাবে সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় না হওয়ায় শহরের সমস্যা সমাধান হয়নি বলেও অভিযোগ তার।
তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এ নির্বাচন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর উপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ নগর জীবন। যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ সেবা পেতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সৎ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা অনিবার্য। কিন্ত নেতৃত্বের অদক্ষতা, অনিয়ম ও দূনীর্তির কারনে আমরা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান সরকার সিটির উন্নয়নে অনেক সহায়তা প্রদান করেছেন। কিন্ত সেসব অর্থের অনেকাংশ ব্যয় না হওয়ায় শহরের সমস্যাগুলির সমাধান হয়নি। অনেক সমস্যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। যা সমাধানের জন্য একজন সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি দরকার, যিনি জনগনকে সম্পৃক্ত করে সরকারের বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতরের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের এসব সমস্যা সমাধান করবেন।
তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে আমি একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরো শক্তিশালী করে এক বৎসর, দুই বৎসর ও পাঁচ বৎসর মেয়াদী তিনস্তর বিশিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহন করবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যে উন্নয়ন যাত্রা শুরু করেছেন, তার সাথে সংগতি রেখে আধুনিক মহানগর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ নির্বাচনে তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ জানান।
প্রস্তাবিত ২৮ দফার ইশতেহারে তিনি গাজীপুর মহনগরীকে গড়ে তোলার জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করার ঘোষনা দেন। জনগনের সেবা নিশ্চিত করতে অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন শ্রেনী পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহন, হোল্ডিং করের হার না বাড়িয়ে সহনশীল পর্যায়ে চুড়ান্ত করা, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অন লাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা এবং ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করা, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহনের অর্থ যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে প্রদান করার উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দেন ইশতেহারে।
নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি গাজীপুর মহানগরের পরিকল্পিত উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, বেকারত্ব দূরীকরণ, সেবার মান বৃদ্ধিকরণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, স্বল্পমূল্যে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা প্রদানের উদ্যোগ, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মৃত্যুর পর প্রয়োজন অনুযায়ী কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরন, ড্রেন ও খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে সংস্কারের ব্যবস্থা করা, গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন ও বীর মুক্তিযোদ্ধ, বিমিষ্টজনদের নামে রাস্তার নামকরন নির্মাণ কাজের গুনগতমান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করা, যানজট নিরসন, পার্কিং, ফুটপাতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরন, জয়দেবপুর রেলক্রসিং এর উপর ফ্লাইওভার নির্মানসহ সমগ্র গাজীপুরে সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলার উদ্যোগ নেওয়া, শিক্ষার মান উন্নয়নে কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলা, অনাথ, গরীব ও যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা, শ্রমজীবী মায়েদের শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ডে কেয়ার স্থাপন করা, বস্তিবাসীর প্রাপ্ত নাগরীক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নত ভবিষ্যত নির্মানের লক্ষ্যে এবং বয়ষ্ক ও শিশুদের মিলনস্থল ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড সেন্টার নির্মাণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়াও বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন এবং থ্রি আর পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বর্জ্যকে জ্বালানী শক্তিতে রূপান্তরের পদক্ষেপ গ্রহন, প্রতি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংরক্ষণ কেন্ত্র স্থাপন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড প্রসারের লক্ষ্যে নতুন অডিটরিয়াম এবং কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মাণ, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠ তৈরী করা ও বিভিন্ন খেলার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা, প্রেসক্লাবের উন্নয়ন ও সংবাদ কর্মীদের সহযোগিতা প্রদান, বয়ষ্ক ও প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সুযোগ সুবিধা প্রদান, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, পার্ক ও উদ্যান নির্মান ও উন্নয়ন, শিশুদের জন্য বিশেষায়িত পার্ক নির্মাণ, ঈদগাহ, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা, স্থানীয় অধিবাসীদের সহযোগিতায় নদী ও জলাশয় দখলমুক্ত, দূষনমুক্ত ও সংস্কারের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহননিয়মিত মশক নিধনের কার্যক্রম গ্রহন, সকল কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহন, ফ্রাইডে মার্কেট স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহন, বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় প্রদান, গাজীপুরের ঐতিহ্য সংরক্ষন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারী স্থাপন, মাদকসেবীদের সুচিকিৎসা ও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, যুব নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা, দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠান এবং প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাজীপুরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি, সিটিজেন চার্টার বা নাগরীক সনদ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে আয়োজন করার বিভিন্ন পরিকল্পনা উল্লেখ করে ঘোষণা দেন নির্বাচনী ইশতেহারে।
ইশতেহারের উপসংহারে তিনি বলেন, নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীকে নূন্যতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সুযোগ পেলে নিজের মেধা-মনন, অভিজ্ঞতা সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার আসল অঙ্গীকার।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনার সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আলীম উদ্দিন বুদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, আব্দুল হাদী শামীম, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, অ্যাডভোকেট অনোয়ার সা’দত, আফজাল হোসেন সরকার রিপন সহ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।