গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনের প্রচারণার সকল কার্যক্রম মঙ্গলবার (২৩ মে) রাত ১২টার পর হতে বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে বেশ জমে উঠেছে এ নির্বাচন। ভোট গ্রহণের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই পাল্টে যাচ্ছে নির্বাচনের হিসেব নিকেশ। দ্রুত পাল্টাচ্ছে নির্বাচনী ময়দানের দৃশ্যপট। সেইসঙ্গে বাড়ছে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের ব্যস্ততা, বাড়ছে নির্বাচনী আমেজ ও উত্তাপ। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলছেন। ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত এক নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী কেন্দ্রের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সদর মেট্রো থানার বিএনপি’র আহবায়ক ২৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান আজমল ভূইয়াকে সহ বিএনপি ও যুবদলের ২৯জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে (বিভিন্ন ওয়ার্ডের) দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
নির্বাচন অনুষ্ঠাণের ভোট গ্রহণের ৩২ ঘন্টা আগে থেকে নির্বাচনী প্রচারণার সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেণা রয়েছে নির্বাচন আচরণ বিধি অনুযায়ী। সে হিসেবে ২৩ মে (মঙ্গলবার) রাত ১২টার পর হতে নির্বাচনী প্রচারণার সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমার শেষ প্রান্তে এসে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও হিসেব নিকেশ কষে শনিবার সরকারী ছুটির দিনেও ঝড় বৃষ্টি ও গরমকে উপেক্ষা করে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের পিছু নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটছেন। তারা প্রতি মুহুর্তকে কাজে লাগাতে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছেন এদিন। ভোটারদের খোঁজে যাচ্ছেন বাড়ি, পাড়া, মহল্লা, হাট-বাজার, দোকান পাট, মার্কেট, মিল-কারখানা ও অফিস আদালতে। প্রত্যন্ত এলাকায় কর্দমাক্ত পথে পায়ে হেঁটে ভোটারদের খোঁজে গিয়ে তারা দিনরাত নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন অনেকে। তারা নানা কৌশলে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোট ও সমর্থন আদায়ের জন্য গণসংযোগ করছেন। যেন কোন প্রতিবন্ধকতাই তাদেরকে থামাতে পারছেনা।
এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এড. আজমত উল্লা খানকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন দলের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা। গণসংযোগে অংশ নিতে আসা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পেয়ে এসব নেতা-কর্মীরা পূনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। দলের মনোনয়ন ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা’র জন্য নির্বাচনী এলাকায় বিরামহীন গণসংযোগ করছেন। তারা মেয়র প্রার্থীর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী তুলে ধরে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি, পাড়ায়, মহল্লায় গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। তারা ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। এতে নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এডভোকেট আনোয়ার সা’দত। এতে অনেকটা নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা। এদিকে বিএনপি এ নির্বাচন বয়কট করায় দলের হয়ে নেতৃস্থানীয়রা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিলেও অনেককে গোপনে সমর্থন দিচ্ছেন অনেকেই। তারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের নানা পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। এতে ভিন্ন মাত্রায় যোগ হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। এ আমেজ ও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে মহানগরীর আশেপাশের এলাকা গুলোতেও।
প্রার্থীদের গণসংযোগ ॥
আওয়ামীলীগ প্রার্থীর গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) এড. আজমত উল্লা খান শনিবার সকালে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মহানগরীর বাসন থানার মোগরখাল স্কুল হতে এদিনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। পরে তিনি ওই থানার ১৩ হতে ১৮ নং ওয়ার্ডের যোগীতলা, চান্দনা, ওয়ারলেসগেট, টিএন্ডটি, নলজানী, বাড়িয়ালী, নগপাড়া, পালেরপাড়া, শাহ আলমবাড়ি, দিঘীরচালা, বারবৈকা, মতি মার্কেট, কলাবাগান, ইটাহাটা, নাওজোড়, কড্ডা, ইসলামপুর, বাসন হক মার্কেট, চান্দপাড়া, ভোগড়া, বাসন সড়ক সহ বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠণের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরাসহ আশেপাশে এলাকার নেতা কর্মীরাও এ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। গণসংযোগ কালে প্রিয় প্রার্থীকে কাছে পেয়ে স্থানীয়রা ভীড় জমায় এবং কুশলাদি বিনিময় করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ॥ টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। শনিবারেও তিনি ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য রাখেন ও ভোটারদের কাছে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট প্রার্থণা করেন। গণসংযোগকালে ৫৭ নং ওয়ার্ডে প্রতিপক্ষের কর্মীরা তার গাড়িকে বাঁধা দেয় এবং হামলা চালায় বলে জায়েদা খাতুনের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান। পরে তারা সদও থানা এলাকায় গণসংযোগ করেন।
জাপা প্রার্থী ॥ জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) শুক্রবার মহানগরীর বসুগঅ৭ও, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দিনভর গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাত পাখা) কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর সদর ও বাসন থানার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি ॥ এদিকে হাতি প্রতীক নিয়ে অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি শনিবার সকাল থেকে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর সদর থানার ২৩ থেকে ৩২ নং ওয়ার্ড এবং কাশিমপুর থানার ১নং হতে ৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন কাউন্সিলরপ্রার্থী ॥
এদিকে গাজীপুর মেট্রো সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসান আজমল ভূইয়া শহওে তার নিজের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে বা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনি প্রথার প্রচলন না থাকায় আমরা প্রথমে ধরে নিয়েছিলেন, এব্যাপারে দলীয় কোনো বিধি নিষেধ থাকবে না। কিন্তু পরবর্তীতে দল ওয়ার্ড পর্যায়েও এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পরও এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমার ঠিক হয়নি। ফলে আমার ভ’লের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।’
প্রসঙ্গতঃ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় মহানগর বিএনপি ও যুবদলের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান আজমল ভূইয়া সহ ২৯ জনকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত ওই পত্র দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীদেরকে কাছে পাঠানো হয়।