আমি শুনেছি আমাকে আবার বহিস্কার করা হয়েছে। আমিতো আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। আমাকে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মী কেন লাগবে? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাকে অন্ততঃ পার্টির (আওয়ামী লীগের) সমর্থক হিসেবে থাকার জায়গাটুকু দেন।
বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ী বহিষ্কারের পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ছয়দানা এলাকার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি দীর্ঘ ১৮ মাস কেঁদেছি, চোখের অনেক জল ফেলেছি। আজ আর কাঁদবো না, চোখের জল ফেলবো না। আমি চেয়েছিলাম সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে থেকে সত্য প্রকাশ করতে। আমি আমার সংগঠনের আদর্শ ও নিয়ম-নীতির বাইরে কোন কিছু করিনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সত্য তথ্যটা উপস্থাপনের জন্য ১৮ মাস আমি বিভিন্নজনের ঘরের দরজায় ঘুরেছি। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় প্রত্যেক নেতার অফিসে অফিসে, ঘরের দরজায় গিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাকে সুযোগ করে দেয়নি। তাঁর কাছে আমাকে পৌছানোর কোনো পথ রাখা হয় নাই। পার্টির কর্মীদের কেউ যদিবিপদে পড়েন তবে স্থানীয়, জাতীয় বা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তা নিয়ে আলোচনা করেন, সমাধান করেন বা সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন। কিন্তু তারা তা করেন নি।
তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগ আমার একটা ভালবাসার জায়গা, নৌকা আমার একটা ভালবাসার জায়গা, প্রধানমন্ত্রী আমার শ্রদ্ধার জায়গা। আমি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম। ২০১৮ সালে আমি নৌকা প্রতিক নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হই।
জাহাঙ্গীর বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর আমি তিন বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। মেয়র হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করার পর শুধুমাত্র অন্য জেলার লোকজনের কিছু অবজেকশনের পরিপ্রেক্ষিতে আমার মেয়র পদটা স্থগিত করে দিয়েছে। আমাকে আর মেয়রের পদে বসতে দেয়া হয়নি। আমি জানি, আমি শপথ নিয়েছিলাম পাঁচ বছরের জন্য। আমি নীতি এবং আদর্শের জায়গায় ছিলাম, আমার উপরে ন্যায় বিচার হয়নি। আমি আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে দেখিয়ে আমার সময়টা পার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি দীর্ঘ ১৮ মাস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এবং কেন্দ্রীয় সকল নেতার দরজায় আমি গিয়েছি। সবাইকে বলেছি, আমাকে একটু সত্য বলার সুযোগ করে দিন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনারা আমার কথা বলুন, না হয় আমাকে কথা বলার জন্য একটু সুযোগ করে দিন। কিন্তু কেউ আমাকে সুযোগ দেয়নি। সকল নেতৃবৃন্দ আমাকে বলেছে, তুমি কোন অন্যায় করো নাই, তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে তোমার বিষয়টা বলব। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, প্রধানমন্ত্রী কাছে এ বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয় নি।
জাহাঙ্গীর বলেন, আপনারা জানেন আমার মা জায়েদা খাতুন একজন সংগ্রামী নারী। আমার মা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমার মা বলেছেন, আমার ছেলের উপর অন্যায় করা হয়েছে। আমার ছেলে যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে মা হিসেবে আমি বিচার করব। গাজীপুরের জনগণ আছেন, তারা বিচার করবে। আমার প্রতি অন্যায় করার প্রতিবাদ হিসেবে মা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। মা বলেছেন তুমি আমার ভোটে থাকবে। মায়ের সন্তান হিসেবে তার হুকুমে আমি আমার মায়ের জন্য কাজ করছি। আমি ক্ষমতার জন্য না, পদের জন্য না, সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমি মায়ের সঙ্গে আছি। তবে আমি দলের সঙ্গে বেইমানী করি নাই, দলের সঙ্গে বেইমানী করবোও না ।
তিনি বলেন, যেখানে নির্বাচন কমিশন চেয়েছে সুষ্ঠু সুন্দর ভোট করতে। সরকারও চেয়েছে জনগন যাতে ভোট দেয়। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি একসঙ্গে এ কাজটা করে, এখানকার লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে। ভোট দিতে গিয়ে যদি এখানে পেশী শক্তি ব্যবহার করা হয়, মারামারি করা হয়, এক ভাই আরেক ভাইকে গালাগালি করে তাহলে এটা পার্টির জন্য ক্ষতিকর। এটাকে ভোটের পরিবেশ বলে না। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সত্যটা জানান। গাজীপুরের ভোটের পরিস্থিতিটা বলেন। তিনি সত্যটা জানুক। এখানে উনার নেতাকর্মীর উপর হয়রানি করা হচ্ছে, অবিচার করা হচ্ছে।
তিনি তার বক্তব্যে মেয়র পদে তার মা জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট দিয়ে মা’কে সম্মান দেওয়ার জন্য সকল ভোটারের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।