শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, একজন সুনাগরিক হতে হলে রাজনৈতিক সচেতন হতে হবে। কারণ আপনার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করবে আপনার ভবিষ্যত, আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ, আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ, আপনার দেশের ভবিষ্যৎ। আপনি কোন্ ভবিষ্যৎ চান, সেটা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। আর আপনি যেটা চাইছেন সেটাই আপনি পাবেন কি-না সেজন্য আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর এ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে আপনাকে জানতে হবে। আর এসব জানার জন্যই আপনার রাজনৈতিক সচেনতা প্রয়োজন।
শনিবার দুপুরে গাজীপুরের সালনাস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) বেগম সুফিয়া কামাল অডিটরিয়ামে চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বশেমুরকৃবি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন। সমাবর্তন সম্পর্কে সাইটেশন পাঠ করেন বশেমুরকৃবি’র ট্রেজারার অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির সম্মানিত ফেলো এবং কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজস্থানের বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এন্ড সায়েন্স এর সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শৌভিক ভট্টাচার্য্য। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম।
শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। সে কারণেই স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের, সবুজ বিপ্লবের। তিনি কৃষিকে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কৃষিকাজে জনগণকে অধিকতর সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষকদের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। তিনি কৃষিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে অদ্বিতীয় রূপকার ছিলেন। যিনি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় আসীন করেছিলেন। সেই মহান নেতার নামে এ বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমরা সকলে গৌরবন্বিত।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা যেমন মানুষের অহংকার দুর করে ঠিক তেমনি জাতিকে পৌঁছে দিতে পারে উন্নতির চরম শিখরে। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ তৎসহ উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি সাধন করতে পারে। একটি অসাম্প্রদায়িক, সৎ দেশ প্রেমিক কর্মকুশল জাতি গড়ে তুলতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। মুলকথা হলো আমাদের ভালবাসতে হবে দেশকে, দেশের মানুষকে, দেশের পরিবেশকে। আর এজন্য প্রয়োজন সুশিক্ষা। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে দাঁড়িয়ে আছি। এসময়ে আমাদের কর্মজীবন পাল্টে যাচ্ছে এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে অনেক চ্যালেঞ্জ আসছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত হচ্ছে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার। এজন্য আমাদের প্রয়োজন হবে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের। আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেল করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। শিক্ষাজীবনের কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টাকে স্বীকৃতি দেয় সমাবর্তন। বিশ^বিদ্যালয়ের অগ্রগতি এবং বিকাশে এ এক গৌরবজনক অধ্যায়।
তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আমরা ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবো, মাধ্যম আয়ের বোংলাদেশ হবো। তার সাহসী, প্রাজ্ঞ, দৃঢ় নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ হয়েছে। আবার তিনি বলেছেন ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। সেই স¥ার্ট বাংলাদেশের জন্য দরকার স্মার্ট শিক্ষা, প্রয়োজন গবেষণা, প্রয়োজন তার উদ্ভাবন ও তার বানিজ্যিকীকরণ। এজন্য প্রয়োজন আমাদের বিশ^বিদ্যালয় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন এবং সহযোগিতা। আমাদের এ অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। এ যাত্রাপথে কুপমন্ডুকতার কোন স্থান নেই, পশ্চাৎপদতার কোন স্থান নেই। সেজন্য সকল অপশক্তিকে রূখে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য আমাদের সকলকেই চোখ কান খোলা রাখতে হবে।
সমাবর্তন বক্তা ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শৌভিক ভট্টাচার্য্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা চমৎকার মানবিক পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে বিশাল কর্মজীবনে প্রবেশ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে বলেন, উন্নত শিক্ষাদান পদ্ধতি ও ফলপ্রসু গবেষণার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি পরিবর্তনশীল বিশ্ব এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদেরকে সক্ষম করে গড়ে তোলার আহবান জানান।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল কৃষি বান্ধব সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের কৃষিসহ সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড. শামসুল আলম সমবেত গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের কাঙ্খিত ডিগ্রি অর্জনে সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যয় অধিক। তাই তোমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। তিনি গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. গিয়াসউদ্দীন মিয়া গ্র্যাজুয়েটদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন তোমরা দেশপ্রেম, মানবীক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতা দিয়ে নিষ্ঠা ও সততার সাথে দেশের কল্যাণে কাজ করবে এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে।
ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. গিয়াস উদ্দিন আরো জানান, বশেমুরকৃবির চতুর্থ সমাবর্তনে সর্বমোট ২হাজার ৩২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ৬০১ জন বিএস (কৃষি), ২৭৭ জন বিএস (ফিশারিজ), ২৩২ জন ডিভিএম, ৩৩৫ জন বিএস (কৃষি অর্থনীতি), ৮৪০ জন এমএস এবং ৩৫ জন পিএইচডি শিক্ষার্থী। তিনি গ্র্যাজুয়েটদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
এরআগে শিক্ষা মন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিগ্রিধারীদের সমাবর্তন শোভাযাত্রা সহকারে সমাবর্তন ভেন্যুতে প্রবেশ এবং সেখানে আলোচনা সভায় যোগ দেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়।