আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে গাজীপুর মহানগরী এলাকার দৃশ্য ও পরিবেশ। ক্রমেই জমে উঠছে এ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনী আমেজে ইতোমধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে সিটি এলাকা। প্রার্থীদের ভোট চেয়ে মাইকিং প্রচারণায় এখন ভিন্ন আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। শহরের অলিগলি, বাজার, রাস্তার পাশে টাঙ্গানো হয়েছেন নির্বাচনী পোষ্টার। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে নির্বাচনী ক্যাম্প। এলাকায় এলাকায় মাইকিং, হ্যান্ডবিল দিয়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় রয়েছেন সমর্থক, কর্মীরা। এলাকায় ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে ভোটারদের কাছে গিয়ে এলাকার উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন, দোয়া চাইছেন প্রার্থীরা। অনেকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার জুম্মাবার হওয়ায় প্রায় সব প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন। এসময় তারা মসজিদ ও আশেপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। চষে বেড়াচ্ছেন নিজেদের নির্বাচনী এলাকা। দিনভর কাটিয়েছেন ব্যস্ত সময়। তারা ভোটারদের খোঁজে যাচ্ছেন বাড়ি, অফিস ও মিল কারখানাসহ বিভিন্ন হাট বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণে। তারা ভোটারদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তারা ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তারা বিভিন্ন কৌশলে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। বসে নেই কোন প্রার্থী। বিশেষ করে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান (নৌকা) সহ হেভিওয়েট প্রার্থীরা হিসেব নিকেষ করে প্রতিটি মুহুর্ত ও বিষয়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তারা বিভিন্ন সভা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন ভোটারদের খুশি করার জন্য। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদের ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে অন্য প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ৮জন, ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আসনে ৭৮ জন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদের ২৪৩ জন সহ মোট মোট ৩২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এদের মধ্যে মেয়র আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. আজমতউল্লা খান (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা), জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. অলিউর রহমান (গোলাপ ফুল) ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ), স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি (হাতি) এবং হারুন অর রশীদ (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করছেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান (নৌকা) কর্মী সমর্থকদের নিয়ে শুক্রবার দিনভর টঙ্গী, সদর, বাসন ও গাছা থানা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। দুপুরে তিনি টঙ্গী এলাকার একটি মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। এসময় তিনি মুসুল্লীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন ও তাদের খোঁজ খবর নেন। গণসংযোগকালে তিনি গাজীপুর সিটির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বৃহৎ পরিকল্পনা মোতাবেক নাগরিক সুবিধা সম্বলিত গাজীপুর মহানগরীকে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ সিটি কর্পোরেশন হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। গণসংযোগের ফাঁকে ফাঁকে তিনি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। পরে তিনি মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগ করেন। পথে একাধিক পথসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন। এসময় দলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন।

এদিকে বসে নেই সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী (টেবিল ঘড়ি) জায়েদা খাতুন। কর্মী সমর্থকদের নিয়ে তিনি শুক্রবার সকালে মহানগরীর সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি এলাকা হতে গণসংযোগ শুরু করেন। ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সালনা, নগপাড়া, তেলীপাড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া, বাসন, বোর্ডবাজার ও পূবাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। তিনি ভোটারদের খোঁজে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন। ঘুরেছেন বিভিন্ন হাট বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ এলাকায়। এসময় তিনি নগরীর উন্নয়নের নানা আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন। গণসংযোগকালে অনুষ্ঠিত পথসভায় মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটের কারণে ঐতিহ্যবাহী গাজীপুর যেন কলঙ্কিত না হয়, জনগণের রায় যেন জনগণ বুঝে পায় এ দাবি করেন তিনি।

অপরদিকে জাতীয়পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন দুপুরে সদর থানার জয়দেবপুর এলাকার সাহাপাড়া জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। এদিন তিনি জয়দেবপুর বাজার এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি ভোটারদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন ও তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (হাত পাখা) মাওলানা গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা) দুপুরে জেলা শহরের গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জু’মার নামাজ আদায় করেন। এসময় তিনি মুসুল্লীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং ভোট প্রার্থনা করেন। এদিন তিনি কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দিনভর সদর ও টঙ্গী থানার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বিগত দিনে যারা সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের অস্বাভাবিক ট্যাক্স নির্ধারণের কারণে নগরবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অথচ বাড়ে নি নাগরিক সুবিধা। সম্পদ ও সেবা না বাড়লেও দু’টি পৌরসভা এবং কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ সিটি কর্পোরেশন বাসীর ট্যাক্সের বোঝা ঠিকই বেড়েছে। যেখানে কোনো নাগরিক সুবিধা নেই, এমনকি শিল্পকারখানাও নেই। সেসব পল্লী এলাকার মানুষের কোন মতামত না নিয়ে কর্পোরেশনের আওতায় ফেলে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ট্যাক্সের বোঝা। এ অবস্থার পরিবর্তনে হাতপাখা প্রতিকে ভোট দেবার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান।

মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী (হাতি) সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি দিনভর গনসংযোগের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তিনি সকালে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকা হতে গণসংযোগ শুরু করেন। দুপুর পর্যন্ত তিনি নতুন বাজার, ব্যাংকের মাঠ, টঙ্গী রেলওয়ে জংশন গোল চত্বর, নোয়াগাঁও, তিস্তার গেট, ফাইসন্স রোড ও চেরাগ আলী মার্কেট এলাকায় গনসংযোগ করেন। দুপুরে তিনি বোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় ও মুসুল্লীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। জুমা নামাজের পর তিনি টঙ্গী মিরাশ পাড়া এলাকার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিবাহোত্তর বৌভাত) যোগদান করেন এবং মিরাশপাড়া ও আরিচপুর মধুমিতা রোড এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকেলে তিনি কাশিমপুর থানা এলাকার ২,৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ করেন।

এছাড়া মেয়র পদের অন্য প্রার্থী সহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করে এবং ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য মোট ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি, এরমধ্যে ৪৯১ টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে।