বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবৈধ, অনির্বাচিত, দখলদার সরকারের অধীনে বাংলাদেশ এখন প্রায় ধ্বংস রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে পতিত হচ্ছে। আজকে তাদের দুর্নীতির কারণে জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সাথে আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, ব্যাংকগুলো পুরোপুরিভাবে খালি করে দেয়া হয়েছে। দেশের অর্থ পাচার করে দিয়ে অর্থব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত সবকিছুতেই একটি নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একইসাথে আমাদের ন্যূনতম যে অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, আমাদের স্বাধীন মত প্রকাশের যে অধিকার তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। এর একটি মাত্র উদ্দেশ্য তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে দেশে যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই দলগুলোর সাথে আমরা এক জোট হয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ। আমরা নির্বাচনকালীন সময় দেখেছি এখানে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে জনগণ ভোট দিতে পারে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুটি নির্বাচন দেখেছি। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এসব দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে যারা আমাদের সহযোগিতায় রয়েছেন তাদের সাথে আমরা আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেকগুলো দলের সাথে আমরা আলোচনা করেছি। আজকে কর্নেল আলী আহমেদ আমাদের সাথে আলোচনা করতে এসেছেন। আজকের আলোচনায় আমাদের শেষ নয়। আবার তার দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করব।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, আমরা যুগোপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছি, এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করার আন্দোলন।
তিনি বলেন, মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না, ঘরে-বাইরে কোথাও তারা শান্তিতে থাকতে পারছে না, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না, সাংবাদিকরাও লিখতে পারে না কারণ আইন করে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এজন্য দেশকে স্বাধীনতা করা হয়নি। এজন্য মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল প্রত্যেকটি মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করবে এবং তারা ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনা করবে।
কর্নেল অলি আহমেদ বলেন, এই আন্দোলন আমাদের জন্য নয়, এই দেশকে মুক্ত করার জন্য। দেশ যতদিন পর্যন্ত মুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা চাচ্ছে যেকোনোভাবে একটি নির্বাচন করার জন্য। আমরা চাই এ নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ থাকবে, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। আমরা চাই প্রত্যেকে তাদের নিজের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। আগামীতে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এদেশ পরিচালনা করবে। তাহলে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পাবে, সামাজিকভাবে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারব। মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। এক বিচার-শাসন থেকে আমরা মুক্তি পাব।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।