আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ, জাপা, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি ও গণফ্রন্ট ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন দোয়া ও সমর্থন আদায়ের জন্য। প্রার্থীরা আচরণ বিধির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নানা অযুহাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ গোছাতে, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।
এবারের গাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আজমত উল্লা খান ও তার কর্মী সমর্থকরা। নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান আজমত উল্লা খান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছি। আগামী ৯ মে প্রতীক বরাদ্ধের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে সবাইকে নিয়ে আমরা নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠে নামব্ ো
গাসিক এর মেয়র পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, আমি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে সুন্দর ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য সবচেয়ে বড় কাজ হলো একটি সুন্দর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। পরিকল্পনাটা শুধু একটা পরিকল্পনা করলেই চলবে না। আমি যেটা চিন্তা করেছি, মেয়র পদে নির্বাচিত হলে আমি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে প্রায়োরিটির ভিত্তিতে পরিকল্পনাকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করবো। আমার এক বৎসরের একটি পরিকল্পনা থাকবে, যে আমি এক বৎসরের মধ্যে কি করতে চাই। আমার দুই বৎসরের একটি পরিকল্পনা থাকবে যেটাকে আমরা মিড টার্ম প্ল্যানিং বলতে পারি। লং টার্ম প্ল্যানিংটা আমি পাঁচ বৎসরে কি করবো এটাকে আমি এইভাবে বিভক্ত করে আনতে চাই।
তিনি পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে বলেন, আমি মোটামুটি ভাবে যেহেতু এই লাইনেই ছিলাম, অর্থাৎ প্রায় ১৮ বছর টঙ্গী পৌরসভার দায়িত্বে ছিলাম। তাই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে পরিকল্পনা মোর অর লেছ আগে থেকেই দাঁড় করিয়ে রেখেছি, আগে থেকেই। এটা আরো সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমি পরিকল্পনাটা স্থির করে ফেলতে চাই। গাজীপুর সিটিকে একটা পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনেকগুলো উপাদান আছে, সেই উপাদান গুলো নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। ব্যক্তিগত ভাবে আমি যেটা মনে করি সিটি কর্পোরেশনের কাজ শুধু মাত্র ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক না। অর্থাৎ আমি রাস্তা করেবো, কালভার্ট করবো এগুলো সিটি কর্পোরেশনের কাজের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় না। ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি আমাদের যে সেবামূলক খাত গুলো আছে, এই সেবামূলক খাতগুলোকে আরো বেশি শক্তিশালী করে সেবার মানকে আরো সুনিশ্চিত করা।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যাটি একটি। এ মহানগরীর বর্জ্য আবর্জনার বিষয়টাকে একটা স্থির লক্ষ্যে নিয়ে আসতে হবে। যদিও এই খাতে সরকার অনেক টাকা বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে। গাজীপুর সিটি কর্পোারেশনে এখন পর্যন্ত কোন ফাইনাল ড্যাম্পিং প্লেস নাই। এই ফাইনাল ড্যাম্পিং প্লেসটির জন্য জমি একোয়ার করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমি কারো সমালোচনা করতে চাই না। অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণেই কিন্তু আজ পর্যন্ত এটা হয়ে উঠেনি। গাজীপুর শহরটাই একটি আবর্জনার নগরীতে পরিণত হয়েছে এবং সবাই যেটার দিকে নজর দিচ্ছে সেটা হলো হার্ড ওয়েস্টেজের দিকে। আমাদের পরিবেশকে হার্ড ওয়েস্টেজ যেমন ক্ষতিগ্রস্থ করছে, তেমনি সফট ওয়েস্টেজ অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল যেসব ওয়েস্টেজ আছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ করছে। হার্ড ওয়েস্টেজ ও সফট ওয়েস্টেজের বাইরেও ওয়েস্টেজ হচ্ছে। আমাদের মহানগরী ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট, এখানে অনেক মিল কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে লিকুইড ওয়েস্টেজ হচ্ছে, যা আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষণ করছে। এ কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে আমাদের পুকুর, খাল, বিল, নদী নালা সহ বিভিন্ন জলাধার। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এতোদিন অন্ততঃ এই লিকুইড ওয়েস্টেজের দিকে কোন নজরদারী করা হয় নাই। তিনি বলেন, লিকুইড ওয়েস্টেজকে যদি আমরা একটি ম্যানেজমেন্টের মধ্যে না আনতে পারি তাহলে পুকুর নদী নালা যা আছে এগুলো সব ব্যাপক হারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। পরিবেশকে নির্মল করার জন্য আমার নির্বাচনী মেনুফেস্টোতে বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। আমি এগুলো নির্বাচনী মেনুফেস্টোতে অবশ্যই তুলে ধরবো এবং এই কাজগুলো কিভাবে করা যায় তার একটা পরিকল্পনার ছক আমি ইতোমধ্যেই করে ফেলেছি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হলে আমি সেগুলো আরো মডিফাই করে সমস্যা সমাধানের জন্য দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করতে চাই।
আজমত উল্লা খান বলেন, যেকোন প্রতিষ্ঠাণের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ। তেমনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য প্রথমটি হলো একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। এটাকে দূর্নীতির উর্ধ্বে রাখতে হলে এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই পিপল পার্টিসিপেশন ইজ মাষ্ট। আমাদের মাঝে একটি ধারা প্রচলিত আছে যে, আমরা সিটি কর্পোরেশনে যাদেরকে নির্বাচিত করে দিলাম, সেইসব মেয়র কাউন্সিলররাই নগরীর উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। আমি এই ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নই। কাজ তারা করবে কিন্তু তার সঙ্গে যদি ’পার্টিসিপেশন অব দি পিপল’ না হয়, তাহলে সেই কাজ কখনই স্বচ্ছ হবে না, ওই কাজের মধ্যে কোন দিন এ্যাকাউন্টিবিলিটি বা জবাবদিহিতা থাকবে না। আর যে কাজে স্বচ্ছতা নাই, জবাবদিহিতা নাই, সেই কাজ দিয়ে কোন দিন কোন ভাল কিছু করা যায় না। সুতরাং ’পার্টিসিপেশন অব দি পিপল ইজ মাস্ট।’
তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার আগে আমি টঙ্গী পৌরসভার মেয়র থাকাকালে প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার জন্য পৌরসভার বাইরেও একটি কমিটি করেছিলাম। ওখানে আমি ওই কমিটির নাম দিয়েছিলাম ’টাউন লেভেল কো-অর্ডিনেশন’ কমিটি। পৌরসভার চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে এ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। নির্বাচনে যারা আমার সঙ্গে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দ্বিতা করেছেন তাদের সবাইকে এই কমিটিতে মেম্বার করেছিলাম। পৌরসভার কমিশনার যারা ছিলেন তারা পদাধিকার বলে এ কমিটির মেম্বার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদাধিকার বলে মেম্বার সেক্রেটারী ছিলেন। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই কমিটির মেম্বার ছিলেন। এছাড়াও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, সাংস্কৃতিক সংসদ সহ বিভিন্ন পেশাজীবি এমনকি বস্তিবাসীদের পক্ষ থেকেও একজন করে প্রতিনিধি এ কমিটিতে ছিলেন। আমদের যে কোন প্রকল্প গ্রহণের আগে টাউন লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে চলে যেত। টাউন লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি বসে আলাপ আলোচনা করে তারা উপস্থাপন করেতো। সেই উপস্থাপনটাই পরবর্তীকালে ফাইনালি এপ্রুবাল বাই দা পরিষদ। পরিষদের যারা তারা কিন্তু ওখানেও ছিল, কাউন্সিলর যারা তারা টাউন লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটিতেও ছিল। এভাবেই প্রতিটি কাজে সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হয়েছিল। শুধুমাত্র মেয়র ও কাউন্সিলররা মিলে একটা উন্নয়ন পরিকল্পনা দিল- নট দ্যাট। সেখানে প্রত্যেকের পার্টিসিপেশনটা থাকবে। এটা হলো জনগণকে সম্পৃক্ত করা, যে জন্য আমার বিরুদ্ধে কিন্তু কোন দিন প্রকল্প নিয়ে কোন অনিয়ম দুর্নীতির কোন অভিযোগ ওঠে নাই। আমার বিরুদ্ধে কারা অভিযোগ করবে – যারা আমার সঙ্গে ইলেকশন করেছে বা যারা ভবিষ্যতে ইলেকশন করবে তার তো ওই কমিটির মেম্বার। সাংবাদিকরাও আমরা বিরুদ্ধে লিখতে পারেনি, কারণ প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারীও কমিটির মেম্বার। এই ধরণের একটা স্বচ্ছতার পরিবেশ আমি এনেছিলাম।
তিনি আরো বলেন, আমি মেয়র পদে নির্বাচিত হলে পিপল পার্টিসিপেশন এবং এটাকে স্বচ্ছ রাখার জন্য কাজ করবো। সাধারণ মানুষকে যেন অযথা হয়রানীর শিকার না হতে হয়, বিড়ম্বনায় না পড়তে হয় সেজন্য পদক্ষেপ নিব। আমি প্রত্যেকটা জোনের অফিসের সামনে এই কার্যক্রমগুলো আবার চালু করবো। অযথা যেন মানুষকে হয়রানীর শিকার না হতে হয়, বিড়ম্বনায় যেন না পড়তে হয় সেজন্য আমি কাজ করবো। প্রতিটি জোনাল অফিসের সামনে সাইনবোর্ড টানানোর ব্যবস্থা করবো, যেখানে নাগরিক সেবার বিভিন্ন বিষয়গুলো উল্লেখ করে চার্ট আকারে বিস্তারিত লেখা থাকবে। এটিকে সিটিজেন চার্টও বলা যায়। যেখানে উল্লেখ থাকবে যেমন- জন্ম ও মৃত্যু সনদের জন্য সেবা গ্রহীতাকে সরকারি ফি কত টাকা জমা দিতে হবে তার পরিমাণ উল্লেখ থাকবে, তাকে কোন রুমে কোন টেবিলে যেতে হবে, কোন ধরনের ব্যবসার জন্য কোন্ ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন ও কত টাকা সরকারি ফি জমা দিতে হবে এবং কতদিনে তা পাওয়া যাবে সেটা উল্লেখ থাকবে ওই চার্টে। অথচ আমরা শুনি যে একটা জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেটের জন্য কোন কোন সময় এক মাস লাগে, আবার কোন কোন সময় ছয় মাস দৌড়িয়েও পাওয়া যায় না। আমি নির্বাচিত হলে এটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিতে হবে, আর যার দায়িত্ব তাকে এটা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, এছাড়াও প্রত্যেকটা বড় বড় কাজের সময় রাস্তার পাশে সাইনবোর্ড দেয়া থাকবে। যেখানে উল্লেখ থাকবে নির্মাণাধীন রাস্তাটা কত ফুট দৈর্ঘ্য, কত ফুট প্রস্থ্য, এটা কি রাস্তা হচ্ছে, এর প্রাক্কলিত মূল্য কত, কোন ঠিকাদার এটা করছে, ওয়ার্ক অর্ডার কবে পেয়েছে এবং কতদিনের মধ্যে এটা সমাপ্ত করতে হবে- এরকম ডিটেইলস লেখা থাকবে ওখানে। যাতে কেউ ২০ ফুটের রাস্তায় ৩০ ফুটের কথা বলে নাগরিকদের হয়রানী করতে না পারে। সেবা পেতে সরকারী ফিসের বাইরে যেন কোন টাকা-পয়সা কাউকে খরচ না করতে হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর পাশাপাশি নাগরিকরা সন্তোষজনক সেবা না পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য অভিযোগ বাক্সও থাকবে। অতীতে টঙ্গী পৌরসভার মেয়র পদে থাকাকালে এধরনের প্রায় ৩২টা জিনিসকে আমি আইডেন্টিফাই করে চার্ট টানানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হতো না। সবাইকে জবাবদিহীতার মধ্যে থাকতে হতো। ফলে পৌরসভার দায়িত্ব পালনে আমার বেগ পেতে হতো না। সকল কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে সুন্দরভাবে পরিচালিত হতো। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হলে আমি অবশ্যই ওই কার্যক্রমগুলো এখানেও আনার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ও জাতীয় সংসদের নির্বাচন এলেই কেউ কেউ আঞ্চলিকতার ধূয়া তুলে ও নানা অপপ্রচার চালিয়ে কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান, ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালান। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে পুরো সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সমানভাবে করবো। অতীতের নির্বাচন গুলোতে আমি যেসব এলাকার ভোট কম পেয়েছি। নির্বাচিত হওয়ার পর আমি সেইসব এলাকার কাজ সবচেয়ে বেশি করেছি। যাতে মানুষ এটা না বলতে পারে যে, আমরা ভোট দেই না বলে, আমাদের কাজ করে নি।
বৃহষ্পতিবার তিনি একাধিক সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।