নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশনে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ৭৮৭ আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং কনটেইনারবাহি ট্রেনের মধ্যে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় চট্রগ্রাম বিভাগীয় রেল এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসক পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

চট্রগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মো: ইমরানকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি এবং কুমিল্লা জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট মো: মোশারফ হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উভয় তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনার পর হাসানপুর রেল স্টেশনের দায়িত্বরত সহকারি স্টেশন মাস্টার আরশুল আজিম গা ঢাকা দেন।

ট্রেন দুর্ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন সোনার বাংলা ট্রেনের গার্ড আব্দুল কাদের (চট্টগ্রাম ডিভিশন), লোকো মাস্টার মো: জসিম উদ্দিন (ঢাকা হেডকোয়ার্টার), সহকারী লোক মাস্টার মো: মহসিন (ঢাকা হেডকোয়ার্টার) ও হাসানপুর স্টেশনের মেইনটেইনার সিগন্যাল ওয়াহিদ।

রোববার রাত ১০টা ও সোমবার সকালে লাকসাম এবং আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে এসে দুটি ট্রেনের লাইনচ্যুত ১১টি বগি উদ্ধার কাজ শুরু করেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দুটি ট্রেনের একটি ইঞ্জিনসহ ১১টি বগির মধ্যে লাইনচ্যুত ৬টি বগি উদ্ধার করা হয়। এ সময় একটি লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। দুর্ঘটনায় প্রায় অর্ধাশতাধিক যাত্রী কমবেশি আহত হলেও কেউ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। লোকজনের ভিড় এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা চট্রগ্রামের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। পরে রাত ৯টার পর থেকে একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

চট্রগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো: আবিদুর রহমান দুর্ঘটার কারণ এবং ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ছাড়া কোনো কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ধুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সোনার বাংলা ট্রেনের বগিগুলো ট্রেন লাইনসহ পাশ্ববর্তী খালি মাঠে পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকারী দুটি রিলিফ ট্রেন লাইনচ্যুত বগিগুলোর উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় দুটি রেল লাইনের প্রায় ৬০০ মিটার ট্রেন লাইন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনগুলো দেখতে শত-শত উৎসুক জনতা ভিড় করেন। ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলো উদ্ধার এবং রেললাইন স্বাভাবিক করতে রেলের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, হাসানপুর রেলস্টেশনে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকাগামী দ্রুতগতির আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানো কনটেইনারবাহি ট্রেনের ওপর সজোরের ধাক্কা দেয়। এতে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিসহ আটটি বগি এবং কনটেইনারবাহি ট্রেনের পেছনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
এ সময় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলো বিকট শব্দে ট্রেন লাইনসহ ধুমড়ে-মুচড়ে পাশের খালি মাঠে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এসে ট্রেনে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী ঢালুয়া বাজারের কয়েকটি ওষুধের ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ লাকসাম এবং কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
রোববার রাত ৮টার দিকে লাকসাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রায়হান মেহেবুব, লাকসাম জিআরপি পুলিশ, নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন।

চট্রগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় হাসানপুরে একটি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা তদন্তে চট্রগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মো: ইমরানকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করবে।

তিনি আরো জানান, ঢাকা-থেকে চট্রগ্রামগামী ৭৮৭ সোনার বাংল এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাসানপুর রেলস্টেশনের ৪ নম্বর রেলপথে দাঁড়ানো কনটেইনারবাহী ট্রেনকে সজোরো ধাক্কা দেয়। এতে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ আটটি বগি এবং কনটেইনারবাহি ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় অনেক লোকের সমাগম এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টাকা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। রাত ১০টা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়। চারটি লাইনের মধ্যে একটি লাইন দিয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে দুটি ট্রেনের ১১টি বগির মধ্যে ৬টি বগি উদ্ধার করা হয়েছে। আশা করি সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে অন্য ৫টি বগি উদ্ধার এবং রেল লাইন মেরামত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।

তিনি আরো জানান, যেভাবে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ট্রেনের বগি ধুমড়ে-মুচড়ে যায়। যাত্রীদের ওই পরিমাণ ক্ষতি হয়নি। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনের পর খাবার বগি ছিল। এর পরে যাত্রীদের বগি ছিল। এতে করে ইঞ্জিন এবং খাবার বগির ওপর বেশি চাপ থাকার কারণে যাত্রীদের বগির চাপ কম থাকায় যাত্রীরা কম আহত হয়েছে।

তিনি দুর্ঘটনার কারণ এবং ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়া ছাড়া এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না।