গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ওয়ালটন কারখানার ইফতার খেয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আরো কয়েক শ্রমিক অসুস্থ্য হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজিত শ্রমিকরা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। মধ্যরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- টাঙ্গাইল সদরের গোসাইর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ আলী (৩০), ভূয়াপুর উপজেলার আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুল বারেক ওরফে বারী (২৯) এবং সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানার কুর্কি মধ্যপাড়া গ্রামের বুদ্দু মিয়ার ছেলে ফরিদ মিয়া (২৮)।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ ও শ্রমিকরা জানান, প্রতিদিনের মতো রবিবার সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রাস্থিত ওয়ালটন কারখানার শ্রমিকদের মাঝে ইফতার সরবরাহ করা হয়। ওই ইফতার খেয়ে কারখানার কয়েক শ্রমিক পর্যায়ক্রমে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তাদেরকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে তিনজন কাশিমপুর থানাধীন তেঁতুই বাড়ি এলাকাস্থিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপর একজন ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
এলাকাবাসি, পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, ইফতার খেয়ে শ্রমিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে রাতেই তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা টায়ার ও কাঠে অগ্নিসংযোগ করে এবং ইটপাটকেল ছুড়ে ভাংচুর করতে থাকে। এতে আব্দুল্লাহপুর-চন্দ্রা সড়কে যানবাহন আটকা পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে বারইপাড়া থেকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কিছু শ্রমিক কারখানার ছাদে উঠে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সানোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। তবে শ্রমিকরা মধ্যরাতেও সড়কে অবস্থান করছিল। তিনি আরো জানান, আমরা তিনজন শ্রমিকের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি, তবে তাদের নাম পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
এ ব্যাপারে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুমায়ূন কবীর বলেন, আমরা প্রতিদিন কারখানার সব কর্মীকে ইফতার সরবরাহ করি। রবিবার সন্ধ্যায় ইফতার করার পর কয়েক শ্রমিক বাহির থেকে এক ধরনের কোমলপানীয় কিনে খান। এরপরই তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাদেকে আমাদের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকজনের অবস্থা অবস্থা অবনতি হলে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন মারা যায়। এ ঘটনায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। মধ্যরাত পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ করছিল।