সুরভিত পুষ্পোদ্যান নয়, নয় সুসজ্জিত মোহিত মঞ্চ গ্রীষ্মের গনগনে দিনে উন্মুক্ত উত্তপ্ত ভূমিতে জন্মেছিল এক ইতিহাস সতের এপ্রিল,শান্তির পায়রা উড়েছিল আম্রকাননের নিভৃত নিকুঞ্জে ফুটে উঠেছিল উত্তাল একাত্তর। স্বাধীনতার দাবী নিয়ে তুলে ধরা সাড়ে সাত কোটি হাতে মেলে ধরা লাল সবুজের পতাকা উড়েছিল বৈধ্যনাথতলা থেকে মুজিবনগর।

আজ ১৭ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে আমাদের জাতীয় জীবনে ধ্রবতারার মত দীপ্ত একটি দিন, এই দিন মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে চোখ মেলেছিল নবজাতক শিশু বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রে দীক্ষিত বাঙ্গালী যে রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করে হাজার বছরের সপ্নলালিত এক সার্বভৌম রাষ্ট্র, যে সংগ্রামের আবেগমথিত উৎসমূখ ছিল মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ।

আমাদের দেশবাসী সূদীর্ঘ দুই শতাব্দীরও অধীককাল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ এবং পাকিস্থানের শাসনে শৃংখলিত ছিল। উপমহাদেশের জনগণ যুগ যুগব্যাপী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে উৎখাত করেছে বৃটিশ ও ঔপনিবেশিক শাসন। পরবর্তীকালে পাকিস্থান আমলে আমাদের দেশবাসী গড়ে তোলে গণতন্ত্র এবং জাতীয় স্বাধিকারের জন্য এক গৌরবময় সংগ্রাম। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা ও শপথ গ্রহনের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর হাজার হাজার মা-বোনের ইজ্জত, অশ্রু এবং কোটি জনতার আত্নত্যাগের সুমহান ঐতিহ্য সৃষ্টি করে এক বীরত্বপূর্ণ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশবাসী প্রতিষ্ঠা করেছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ২০০ বছর আগে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা সুর্য অস্ত যাওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আবার সেই তৎকালিন প্রাচীন জেলা নদীয়ার আর এক অংশে মেহেরপুর মুজিবনগরের আম্রকাননে স্বগর্বে আত্নপ্রকাশ করে ছিল বাংলাদেশ-এর স্বাধীনতার সুর্য । আর সেই থেকে পালিত হয়ে আসছে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস।

প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও পালন করা হবে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস। এবছর করোনা না থাকায় জাঁকজমকভাবে দিনটি পালনের ইচ্ছে ছিল সরকারের কিন্তু পবিত্র মাহে রমজানের কারনে সীমিত আকারেই পালিত হবে দিনটি। বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ অনেক অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে এবার। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ,ক,ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, বাংলাদেশ আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, বিভিন্ন জেলার সংসদ সদস্যগণ সহ আ’লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে উপস্থিত থেকে ভাষন দেবেন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দিবসটি উদযাপনের জন্য ঐতিহাসিক আম্রকানন ও মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স সহ এর চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

পুলিশ সুপার রাফিউল ইসলাম যায়যায়দিনকে জানান, মুজিবনগর দিবস পালন উপলক্ষে চার স্তর বিশিষ্ঠ নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনশৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ আজিজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৭ এপ্রিল পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বাইরে থেকে জেলায় সে সব ভিইপি গেষ্ট এসছে তাঁদের থাকার ব্যবস্থাসহ সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রি ফরহাদ হোসেন যায়যায়দিনকে জানান, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ,ক,ম মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, বিভিন্ন জেলার সংসদ সদস্যগণ সহ আওয়মী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন।