গাজীপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে খুনের আসামী ধরার কথা বলে শ্রমিক কর্মচারীদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে জ্যাক ব্যাটারি কারখানার গুদামে ডাকাতি করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আন্ত:জেলা ডাকাত দলের ৭ দুধর্ষ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর পুলিশ (জিএমপি)। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত ট্রাক, পুলিশের জ্যাকেট, খেলনা পিস্তলসহ ৬টি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪ থেকে ৩৬টি পর্যন্ত ডাকাতি মামলা রয়েছে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে জিএমপি’র গোয়েন্দা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ইব্রাহিম খান এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ঘরফতিপুর গ্রামের শাহ আলমের ছেলে আরিফুল ইসলাম সোহান (৩০), জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পোলাকান্দি গ্রামের মুছলিম উদ্দিন মছির ছেলে মমিনুল ইসলাম রূপচান (৩৫), টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পঁচিশমাইল গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে বিল্লাল হোসেন নজরুল (৪০), রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফুটলক্ষীপুর গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩২), মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কুলাপাড়া গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর ছেলে রুবেল (২৯), একই উপজেলার কুলাপাড়া গ্রামের মৃত রবিউল আলমের ছেলে জাকির হোসেন (৪২) এবং ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাংলা গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান (৫৭)। তারা গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো।
জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ জানান, গত বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) ইফতারের পরপরই নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল ডাকাত মহানগরের দেশীপাড়া এলাকার জ্যাক ব্যাটারী গোডাউনে হানা দেয়। এসময় তারা সেখানে খুনের মামলার আসামী আত্মগোপন করে আছে বলে তল্লাশির নামে গুদামের শ্রমিক কর্মচারীদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়। পরে তারা কৌশলে একজন একজন করে প্রত্যেককে দোতলায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে ও মুখ স্কচটেপ পেঁচিয়ে মারধর করে। তারা গোডাউনের ভিতরে ট্রাক ঢুকিয়ে গোডাউনে থাকা ১৩৯ টি ব্যাটারী, নগদ ৩ লাখ টাকা, কর্মচারীদের ১৪টি মুঠোফোন, সিসিটিভি ক্যামেরার ১টি ডিভিআরসহ ১৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করে ডাকাতদের সনাক্ত করার চেষ্টা করে। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩৬টি ডাকাতি মামলার আসামী মিজানুরকে শুক্রবার বিকেলে টঙ্গী কলেজ গেইট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপর ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত ১টি ট্রাক, ডিবি পুলিশের ১টি জ্যাকেট, ১ টি খেলনা পিস্তল, মেট্রোপলিটন পুলিশের পোশাক, পিটি সু, টুপি, বেল্টসহ ৬টি তাজা ককটেলসহ লুট করে নেয়া ব্যাটারীর মধ্যে ১০৩ টি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের দুধর্ষ সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গাজীপুর, কেরাণীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন থানায় ৪ থেকে ৩৬টি পর্যন্ত ডাকাতি মামলা রয়েছে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক ডাকাত সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি’র উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মোঃ শামছুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ) রেজওয়ান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।