চৈত্র শেষে বৈশাখ এসেছে। আর বৈশাখের প্রথম দিনেই অসহনীয় গরমে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় দেশের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। এনিয়ে টানা ১৩ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হলো।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ এখন আরো তীব্রতর হচ্ছে। এই টানা তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র তাপদাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছে। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে সব শ্রেণির মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। জেলা সদরের হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বেড়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগীর সংখ্যা।
চুয়াডাঙ্গা গুলশানপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী নারগিস আক্তার বলেন, এতো তাপে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। রান্না-বান্না করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ইফতারীর পরে রোদ আর তাপ কমলে চুলার পাড়ে যাবো।
চুয়াডাঙ্গা সদরের কুলচারা গ্রামের শফিউল বলেন, ‘এত তাপ সহ্য করা কঠিন। জমিতে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলাম না। এখন ছায়ায় বসে আছি। আজ কাজ শেষ করতে দেরি হবে। যে গরম পড়ছে, আর কাজ করতে পারব কিনা জানি না।’
একই গ্রামের তাপস দাস বলেন, ধানে এখন শিশ বের হয়েছে, কিন্তু প্রচণ্ড রোদে তা পুড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানিও দেওয়া লাগছে। যেখানে আগে সপ্তাহে দুদিন পানি দিলেই চলত। এখন প্রতিদিন দিতে হচ্ছে। তারপরও কি হবে বলা যাচ্ছে না।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবি এমদাদুল হক এমদাদ বলেন, মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন স্থানে মার্কেটিংয়ের কাজ করি। মোটরসাইকেল চালালে বাতাসে স্বস্তির লাগলেও আজ রোদের প্রখরতার কারণে মনে হচ্ছে গরম হাওয়ায় পুড়ে যাচ্ছে শরীর। রোজায় আছি। এই গরমে গলা-বুক যেন শুকিয়ে আসছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়। যা ছিলো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত একটানা ১৩দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১১ এপ্রিল অর্থাৎ গত মঙ্গলবার ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আজ ১৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, আজ ১৪ এপ্রিল দুপুর ৩টায় দেশের ও এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এই মৌসুমের ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া গত ২ এপ্রিল থেকে আজ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এই চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হলো। আপাতত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে এই তাপমাত্রা আরো বাড়বে। আর আজ থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে।