রাজধানীর ৩৫টি শপিংমল পরিদর্শন শেষে ৯টিকে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্যতায় ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অতিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর মধ্যে গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট অন্যতম। এখানে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এক বছর আগে এ মার্কেট পরিদর্শন করে ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মার্কেটের দোকান মালিক সমিতি একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন করেনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলিস্তান পাতাল মার্কেট পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (অপারেশনস) বজলুর রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

এর আগে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে অগ্নিঝুঁকি অ্যাসেসমেন্টের উদ্দেশ্যে পাতাল মার্কেট পরিদর্শন করে।

২০২১ সালের ৬ অক্টোবর মার্কেট পরিদর্শনের নথি দেখিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক বজলুর রশীদ বলেন, গতবারের পরিদর্শন শেষে গুলিস্তান পাতাল মার্কেট কর্তৃপক্ষকে আমরা ১৯টি সুপারিশের একটি প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। এতদিন পর পরিদর্শনে এসেও কোনো উন্নতি দেখলাম না।

সুপারিশ বাস্তবায়ন না করলে ফায়ার সার্ভিস কী ব্যবস্থা নিতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবেদন দিতে পারি। জানাতে পারি, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিতে পারি। বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। আপনার মার্কেট তো আমি ঠিক করে দেব না। আমাদের কাজ আপনাদের পরামর্শ দেওয়া। সেফটির ব্যবস্থা আপনাদের নিজেদেরই করতে হবে। আমি বলব, আপনারা আজকের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেন।

এদিকে নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করে গুলিস্তান পাতাল মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ শাহ বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ৪০ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এরপর প্রতি বছরই ফায়ার সার্ভিসের টিম মার্কেটটি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে; কিন্তু প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফেণের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান ২-এ একটি ১২তলা ভবনের আগুন চার ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট, সঙ্গে ছিল বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। গত ৫ মার্চ ধানমণ্ডির সায়েন্সল্যাব এলাকার একটি ভবনে বিস্ফোরণ। তার দুই দিন পর ৭ মার্চ সিদ্দিকবাজারে ক্যাফে কুইনে বিস্ফোরণে ২৬ জনের মৃত্যু হয় ও শতাধিক আহত হন।

২৭ মার্চ রাজধানীর মহাখালীতে সাততলা বস্তি ও কাপ্তানবাজারের জয়কালী মন্দির সংলগ্ন সুইপার কলোনিতে আগুন লাগে। গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিঃস্ব হয়ে যান হাজার হাজার ব্যবসায়ী। এসব ঘটনায় আবার নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ৫ হাজার ৮৬৯ ভবন পরিদর্শন করে। এর মধ্যে সরকারি ১৩৩৭টি ও বেসরকারি ৪৫৩২টি ভবন রয়েছে। এসবের মধ্যে অগ্নিনিরাপত্তায় সন্তোষজনক সার্টিফিকেট দেওয়া হয় ৩ হাজার ৯৭টি ভবনকে। আর অগ্নিনিরাপত্তায় ‘ঝুকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয় এক হাজার ৬০৬টি ভবন। এ ছাড়া ৬১৭ ভবনকে অগ্নিনিরাপত্তায় ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়।

২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনিরাপত্তায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ছিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট, রাজধানী মার্কেট, গুলিস্তান পাতাল মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, সদরঘাট গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ ও পোশাক মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা সুপারমার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল মিলনায়তন ও শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট, কারওরান বাজার কাঁচাবাজার মার্কেট এবং গুলশান কাঁচাবাজার মার্কেটসহ আরও কিছু মার্কেট ও আবাসিক ভবন।

ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবাজারের ঘটনার পর রাজধানীতে অগ্নিনিরাপত্তায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটের তালিকা ধরে পরিদর্শন করার জন্য ফায়ার সার্ভিস সাতটি টিম গঠন করেছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ টিম রয়েছে। তারা রাজধানীর সব মার্কেট পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে।

তিনি বলেন, মে মাসের মধ্যে ভবন ও মার্কেট অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে পরিদর্শনের কাজ শেষ করা হবে। এবার ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে এনএসআই-ডিজিএফআইয়ের গোয়েন্দারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিদর্শনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের পরিদর্শন করা ভবন ও মার্কেট সম্পর্কে রিপোর্ট করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মার্কেট পরিদর্শনের বিষয়ে আগামী রোববার একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।