রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুচের বাসা হতে ১৬-ভারি স্বর্ণ অলংকার চুরি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহের তীর বিউটিশিয়ান মুন্নি বেগমের দিকে।
গত ১৪ ই জানুয়ারি (সোমবার) ২০২৩ ইং তারিখ ইউনূচের ভাড়া বাসা চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন নাসিরাবাদ হাউসিং সোসাইটি ৬ নাম্বর রোডের ৪ নাম্বার বাড়ি জাহেদ টাওয়ারে এই ঘটনা ঘটে।
থানায় করা জিডির সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পূর্ব চন্দ্রঘোনার খন্দকার পাড়ার আমতলী এলাকায় আবু ইউসুফ এর কন্যা মুন্নি বেগম (৩০) পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। তিনি চট্টগ্রামের চানঁগাও আবাসিক বি ব্লক এলাকায় ১৪ নম্বর রোড ৩৭৭ নম্বর বাসা ২য় তলায় মুন্নি বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারি।
একই সূত্রে জানা যায়, মুন্নী ইউনুচের স্ত্রী শামীমা আক্তারের দুঃসম্পর্কে আত্মীয় হন। সেই সুবাদে তিনি তার বিউটি পার্লারে আসা-যাওয়া করতে করতে তাদের মধ্যে সখ্যতা বেড়ে ওঠে। এরই মধ্যে তাদের ঘনিষ্ঠতা পারিবারিক পর্যায়ে চলে যায়, মুন্নি মাঝেমধ্যে ইউনুচের অবর্তমানে শামীমার সাথে রাত্রি যাপন করত। আবার বিভিন্ন সময় শামীমার নিকট টাকা ধার নিতো, এযাবৎ ৬ লক্ষ টাকা পাওনা আছে বলে জিডির সূত্রে জানা যায়।
ঘটনার সম্পর্কে ইউনুচ বলেন, গত ১৩ই জানুয়ারি (শুক্রবার) ২০১৩ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মুন্নি আমার নাছিরাবাদ বাসায় রাত্রি যাপন করে পরের দিন সকালে তিনি বাসা থেকে প্রতিবারের ন্যায় চলে যায়। ঐদিন বিকালে আমার স্ত্রী বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় আলমারি খুলে দেখতে পাই গলার হার, কানের দুল, হাতের বালা, গলার চেইন, আংটি, হাতের চেইন ও গলার রকেটসহ প্রায় ১৬ বরির অধিক স্বর্ণ অলংকার নেই। রাত্রে বাসায় মুন্নি ছিল তাই সন্দেহ মূলকভাবে তাকে ফোন করলে সন্দেহজনক আচরণ করতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, মুন্নির সাথে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা হলে আমি ধার নেওয়া টাকা দেওয়ার কথা বললে ৬ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে। এর আগেও তার কাছে অনেকবার পাওনা টাকার কথা বললেও এড়িয়ে যেত, ঘটনার পরে টাকার কথা বললে, তখন হুট করে তিন লক্ষ টাকা বের করে দেয় এতে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণালংকার মুন্নি চুরি করেছে। তাছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা হতে নিশ্চিত হয়েছি ঘটনার দিন মুন্নি ছাড়া আমার বাসায় আর কেউ আসেনি। তাই আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ অলংকার মুন্নি চুরি করেছে।
ইউনুচ মুন্নির বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, গত ১০-৮-২০২০ ইং তারিখে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের লিচুবাগান এলাকায় দৌলতুনেচ্ছা ভবনের ৩য় তলায় বসবাসরত কামাল উদ্দিনের স্ত্রী শারমিন আক্তার স্বর্ণা (২৫) অভিযুক্ত বিউটিশিয়ান মুন্নি বেগমের বিরুদ্ধে মারামারি ও সম্পদ আত্মসাধ করায় বিজ্ঞ জুডিশিয়াল আদালতে একটি মামলা করে, (সি আর মামলা নম্বর ১৩৬/২০২০)। এছাড়াও গত ৬-১১-২০২১ ইং তারিখে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের কোকানিয়া এলাকার মোহাম্মদ আইয়ুবের ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ (৩১) জালিয়াতকারি, প্রতারক, বিশ্বাস ভঙ্গকারী, পরধন লোভী ও অর্থ আত্মসাৎকারি মুন্নি বেগমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সি আর মামলা নম্বর ৩৫৮/২০২১) ফৌজদারী মামলা করেন।
এদিকে মুন্নি বেগমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, “ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট, তারা আমার সাথে চাঁদাবাজি করতেছে, আমার কাছে প্রমাণ আছে। পরিবার থেকে আমাকে বলা হয়েছে মামলা করার জন্য কিন্তু আমি মামলা হামলাতে যায়নি, আমি শুধু একজনকে বিচার দিয়েছি যিনি আমাদের অভিভাবক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি মহোদয়কে। উনি দেখতেছেন বিষয়টা এবং উনি করতেছেন, উনি কি করেন ওনার অপেক্ষায় আমি বসে আছি। আসলে তাদের আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নাই। এটা শুধুমাত্র চাঁদাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। এর এক বছর আগে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল কিন্তু আমি দিইনি, এরপর এখন আবার চাঁদাবাজি করতেছে এগুলোর সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।
চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য মনিরা চৌধুরী শিমু বলেন, একই এলাকার বাসিদার সুবাদে মুন্নি বেগমকে দীর্ঘদিন ধরে জানি, আমার জানামতে ইউনুস ভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সত্য বলে মনে হচ্ছে কারণ সেই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সুদের ব্যবসা করে আসতেছে এবং কোন কারণে সুদের টাকা দিতে বিলম্ব হলে ওই ব্যক্তির উপর মারদর ও অমানুষিক নির্যাতনের করেছে অহরহ।