মিরসরাইয়ে বিজিবি’র সাক্ষী হওয়ায় সোর্স সন্দেহে সাক্ষীর উপর মাদক কারবারিদের সংঘবদ্ধ সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগর নিচুতলা বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় হামলার শিকার একই এলাকার মৃত মফিজুর রহমানের পুত্র ফখরুল ইসলাম (২৫) জোরারগঞ্জ থানায় একই এলাকার মৃত নুরুল হুদা’র পুত্র শিপুল (৩৫), তার দুই সহোদর শওকত (৪২) ও শাকিল (৩০), কামাল উদ্দিনের পুত্র ফারুক (২৮) শওকত এর পুত্র শরিফ (২০) ও বাবনের পুত্র শাহাদাত (২০) এই ৬ জনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি)’র অধীনস্থ “বি” কোম্পানি অলিনগর (বিওপি) ক্যাম্পের সদস্যরা করেরহাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পশ্চিম অলিনগর নিচুতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই এলাকার নুরুল হুদা ডাক্তার বাড়ির মৃত নুরুল হুদার পুত্র মোঃ লিয়াকত হোসেন শিপুল (৩৫) কে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা সিজার মূল্যের
৪৯৫ পিস ইয়াবা সহ আটক করে। ঐসময় আজিজুল হক, ফখরুল ইসলাম ও আলমগীর প্রকাশ দেলোয়ার হোসেন সহ তিনজন বিজিবির উপস্থিত সাক্ষী হয়। উক্ত ঘটনায় একটা মাদকের মামলা রজু করে আসামিকে কোর্টে প্রেরণ করা হয় এবং মাদক কারবারি শিপুল প্রায় ১ মাস জেল খেটে গত ৩ ফেব্রুয়ারী জামিনে বের হয়ে আসে।
শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিজিবির সাক্ষী হওয়ার জেরে এবং বিজিবির সোর্স সন্দেহে অভিযোগে উল্লেখিত অভিযুক্তরা ফখরুল ইসলামের উপর চড়াও হয়, সংঘবদ্ধভাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে, প্রাণনাশের চেষ্টা চালায় এবং পকেটে থাকা নগদ ৫০ হাজার ৮০০ টাকা, ১০ হাজার টাকা মূল্যের মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন সেট ও গলায় থাকা আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ০৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন চিনিয়ে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মাদক সহ আটক হওয়ার পর জামিনে বের হয়ে এসে পূর্বের ন্যায় দেদারসে, দাপটের সাথে মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে শিপুল।
হামলার শিকার ফখরুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে বিজিবি অলিনগর ক্যাম্পের সদস্যদের অভিযানে শিপুল নামে একজনকে ইয়াবা সহ আটক করে। ঐসময় বিজিবির অনুরোধে দ্বিতীয় সাক্ষী হই। শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় নিচুতলা বাজারে গেলে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা মাদক কারবারি শিপুল তার দলবল নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে উৎপেতে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে আমার উপর অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে এবং প্রাণনাশের চেষ্টা চালায়। সেই সাথে আমার সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণের চেইন ও মুঠোফোন চিনিয়ে নেয়। আহত অবস্থায় আমাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে জোরারগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি এবং হামলার বিষয়টি বিজিবি অধিনায়ক (সিও) ও অলিনগর ক্যাম্প কমান্ডারকে অবহিত করেছি।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি, আমাকে অলিনগর ক্যাম্প থেকে জানানো হয়েছে।
বিজিবি’র সাক্ষী দেওয়া ফখরুল ইসলামের উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অলিনগর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার শহিদুল ইসলাম বলেন আমি এবিষয়ে অবগত আছি তবে আপনি উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাফিজুল ইসলাম জানান, অলিনগর এলাকায় ফখরুল ইসলাম নামে একজনের উপর হামলার ঘটনায় ২৭ মার্চ (সোমবার) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং এই বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আকতার হোসেন, মিরসরাই প্রতিনিধি