মেঘনা নদীতে আগামীকাল ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সময় ওই এলাকায় নদীর মাছ কেনা-বেচা, মজুত ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
‘মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মৎস্য অধিদফতর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ উপলক্ষে লক্ষীপুর জেলা প্রসাশকের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রত্রি জেলা মৎস্য অধিদফতরের আয়োজনে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় ইলিশ সম্পদ রক্ষায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে জেলার রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনার নদীর ১০০ কিলোমিটার ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মেঘনার অভয়াশ্রমে মাছ ধরা বন্ধ রাখার জন্য জেলেপল্লীসহ মাছঘাট এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিভিন্ন হাটবাজারে সচেতনতামূলক সভা, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিং করার মাধ্যমে এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। এছাড়া মাছ ধরা প্রতিরোধের জন্য মোবাইল কোর্টও পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস উল্লেখিত অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। এ সময় ইলিশের অভয়াশ্রমসমূহে ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। মৎস্য সুরক্ষা ও আইন ১৯৫০ এর ধারা ৩ এর উপধারা ৫ আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪ মাস জেলে পরিবারগুলোকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। জেলার নিবন্ধিত ২৮ হাজর ৩৪৪ জেলে পরিবারের জন্য ৪ হাজার ৫৩৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এছাড়া নিষিদ্ধকালীন বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে ২০টি আদর্শ গ্রামে জেলেদের ২০টি গ্রুপ করে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রত্যোক গ্রুপকে ১০ লাখ টাকা করে সুদ মক্ত ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়েছে।
ইলিশ জেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ইতোমধ্যে ১৬০টি বকনা গরু বিতরণ করা হয়েছে এবং আরো ৫ শতাধিক বকনা গরু বিতরণ করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, প্রশাসন ও কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগ যৌথভাবে নদীতে অভিযান পরিচালনা করবে।
জেলা প্রশাসক মো: আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, আগামী দুই মাস লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন ভঙ্গ করে নদীতে মাছ শিকার করলে অভিযান করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতে বিতরণ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিযেছেন তিনি।