প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সেই নির্যাতিতা ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেনের তত্ত্বাবধানে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রবেশ করানো হয়। তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগী ছাত্রী ঘটনার বর্ণনা দিতেই ক্যাম্পাসে ফিরেছেন বলে নিশ্চিত করেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। ভুক্তভোগীর সঙ্গে তার বাবা ও মামা এসেছেন বলে জানা গেছে।
পরে প্রভোস্টের কার্যালয়ে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথকভাবে ভুক্তভোগীর বক্তব্য শোনেন। তার থেকে লিখিত অভিযোগও নেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ভুক্তভোগীকে নিয়ে যেসব রুমে তাকে নির্যাতন করা হয় সেখানে, ৩০৬ নং রুম এবং হল ডাইনিং পরিদর্শন করেন তদন্তে থাকা সদস্যরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডল, সদস্য প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও ড. মুর্শিদ আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম ও হল কর্তৃক গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ড. আহসানুল হক, সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক এবং প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তদন্ত কমিটির সঙ্গে বিকেল পাঁচটার দিকে হল থেকে বের হন ভুক্তভোগী ও তার অভিভাবকরা।
এবিষয়ে হল কর্তৃক গঠিত কমিটির আহবায়ক আহসানুল হক বলেন, আমরা তদন্তের প্রথমদিন ভুক্তভোগীর সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি, তার বক্তব্য শুনেছি এবং তাকে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এছাড়া ঘটনা সম্পর্কে গণরুমগুলোতে অবস্থানকৃত মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি।
এদিকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা হলের উদ্ভুত ঘটনার বিষয়ে কারোর নিকট কোনো তথ্য প্রমাণাদি থাকলে তা লিখিত আকারে বা সশরীরে কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলের অফিসে ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টার মধ্যে জমা দেয়ার জন্য বলা হলো। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিশবিদ্যালয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডল বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি মিটিং শুরু করেছি সকাল ৯টায়। তদন্তের সাপেক্ষে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। প্রশাসন থেকে তদন্তের স্বার্থে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সরেজমিনে তদন্ত করতে হলে গিয়েছি। ঘটনাস্থলসহ চার জায়গায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগীর বক্তব্য ঘন্টাব্যাপী শুনেছি। এছাড়া গণরুমের মেয়েদের বক্তব্য শুনেছি। সোমবার সকাল ১০ টায় তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের ডেকেছি। প্রক্টরিয়াল বডিকে ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা প্রদানে সর্বোচ্চ নির্দেশনা দিয়েছি। সবমিলিয়ে তদন্তের কাজে অনেকদূর এগিয়েছে।
এদিকে গণরুমের ও হলের শিক্ষার্থীদের সূত্রে ঘটনায় জড়িত আরো তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাওয়াবিয়া। তারা তিনজনই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তারা।
মীম বলেন, ‘আমি নির্যাতনের সময় ছিলাম না। আমি আমার রুমেই ছিলাম। শুধু অন্তরা আপুর নির্দেশে ওই মেয়েকে ৩০৬ নম্বর রুম থেকে দোয়েল-১ নামক গণরুমে রেখে চলে আসি।’
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, আমি এখন নিরাপদে আছি। তদন্ত কমিটি সেদিনের ঘটনার বর্ণনা শুনেছে এবং ৪-৫ পেজের আমার স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ নিয়েছে। আজ আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। পরবর্তীতে তদন্তের স্বার্থে আবার ডাকলে আসবো। আমি দোষীদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।
ভুক্তভোগীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সুষ্ঠু তদন্তের পর ন্যায়বিচার করা হবে। আমি চাই দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক যেন এমন ঘটনা দেশে তথা সমস্ত বিশ্বে আর না ঘটে।
এ বিষয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, সারাদিন ভুক্তভোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে যা যা করণীয় আমরা তাই করেছি। দুপুরে মেয়েটি তার পরিবারসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার আগে বক্তব্য প্রদান শেষে তিনি ও তার পরিবার নিরাপদে বাড়ি ফিরে গেছেন।
আবির হোসেন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি