গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিগত ২৪ ঘণ্টা রাশিয়ার জন্য ভয়ঙ্কর সময় ছিল বলে দাবি করেছে কিয়েভ। কারণ এই সময়ে দেশটির সহস্রাধিক সেনা নিহত হয়েছেন। ইউক্রেন বলছে, তীব্র শীতকালীন আক্রমণের লক্ষ্যে মস্কো কয়েক হাজার নতুন সেনা এবং ভাড়াটে সেনা নিয়োগ করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, সোমবার রাশিয়ার এক হাজার ৩০ সেনা নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর পর একদিনে রাশিয়ার সর্বোচ্চ সেনা হারানোর ঘটনা এটি। এ নিয়ে রাশিয়ার মোট এক লাখ ৩৩ হাজার ১৯০ সেনা নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে কিয়েভ। যদিও ইউক্রেনের এ রকম দাবির ব্যাপারে সাধারণত রাশিয়া কোনো মন্তব্য করে না। তবে মস্কো দাবি করেছে, গত এক সপ্তাহে ইউক্রেনের সাড়ে ছয় হাজার সেনা নিহত হয়েছে।
গার্ডিয়ান বলছে, ইউক্রেনের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই-বাছাই করা যায়নি। তা ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, ক্ষতির বিষয়ে অনুমান করা খুব কঠিন।
এদিকে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মঙ্গলবার দাবি করেছে, ইউক্রেনে সফল সামরিক অভিযান পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত গোলাবারুদ বর্তমানে রাশিয়ার হাতে নেই। এমনকি স্থানান্তর করার মতো সক্ষম সেনা ইউনিটের ঘাটতিও রয়েছে দেশটির।
গার্ডিয়ানের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ গোয়েন্দা তথ্যে এমন মন্তব্য করে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে রাশিয়া বড় ধরনের সফলতার দাবি করতে পারে। কিন্তু রুশ সেনাবাহিনীর এমন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই, যা দিয়ে আগামী সপ্তাহগুলোতে যুদ্ধের ফল নির্ধারণ করতে পারবে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এমন সময় এ ধরনের দাবি করল, যখন ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, বিশেষ করে যুদ্ধ শুরুর বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে দেশটির পূর্বাঞ্চলে নতুন করে আক্রমণ শুরু করতে পারে রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ গত সোমবার দাবি করেন, রাশিয়া আগামী সপ্তাহগুলোতে পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বড় ধরনের হামলা শুরু করতে পারে। তবে এ ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করার মতো প্রয়োজনীয় সেনা ও সরঞ্জাম রয়েছে তাদের। এমনকি পশ্চিমা ট্যাংক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এসে না পৌঁছালেও রুশ হামলা ঠেকিয়ে দিতে পারবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রুশ সেনারা প্রতি সপ্তাহে মাত্র কয়েকশ মিটার করে অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সফল অভিযান পরিচালনা করার মতো গোলাবারুদ এবং স্থানান্তর করার মতো সক্ষম সেনা ইউনিটের ঘাটতিতে রয়েছে রাশিয়া।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে প্রতিবেশী ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। মস্কোর ধারণা ছিল, এক সপ্তাহ কিংবা সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে ইউক্রেনে তাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে। কিন্তু দেখতে দেখতে বছর পূর্ণ হতে চললেও উল্লেখযোগ্য কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি দেশটি। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্রের সরবরাহকে দায়ী করছে পুতিন প্রশাসন।