চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলার সংযোগস্থল চন্দ্রঘোনা ফেরিতে মোটর সাইকেলে দ্বিগুণ শুল্ক আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
কর্ণফুলী নদীতে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৮৪ সালে চন্দ্রঘোনায় ফেরি সার্ভিস চালু করে, ৩৯ বছর ধরে ২ লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে এই ফেরিতে। প্রথম থেকে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয় (সওজ) চন্দ্রঘোনা সড়ক উপবিভাগ (রাঙামাটি) ভাড়া নির্ধারণ করে আসছে। নির্ধারণত ভাড়ার তালিকা রাইখালী ইউনিয়ন ফেরিঘাট এলাকাতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হলেও দ্বিগুণ শুল্ক আদায়ের অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয় (সওজ) চন্দ্রঘোনা সড়ক উপবিভাগ (রাঙামাটি) এর নির্ধারিত শুল্ক, ট্রেইলার ২৫০টাকা, হেভি ট্রাক ১৫০টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১০০টাকা, বড় বাস ৯০টাকা, মিনি ট্রাক/পিক আপ ৭৫টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহারিত যান ৬০টাকা, মিনিবাস ৫০টাকা, মাইক্রোবাস/জিপ/ফোর হুইল চালিত যানবাহন ৪০টাকা, সিডান কার ২৫টাকা, ৩/৪ চাকার মোটররাইজড যানবাহন ও সিএনজি ১০টাকা, মোটরসাইকেল/ঠেলাগাড়ি/ভ্যান/রিক্সা/সাইকেল ইত্যাদি ৫টাকা, মানুষ বোঝসহ ২টাকা হারে শুল্ক আদায়ের কথা থাকলেও উপরে উল্লেখিত পরিচিত বড় গাড়ি হতে নির্ধারিত শুল্ক আদায় করলেও অপরিচিত যানবাহন, মোটর সাইকেল ও যাত্রীদের কাছে ডাবল শুল্ক নেওয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪০উর্ধ্ব নাম বলতে অনীহা প্রকাশ করা ফেরিতে কর্মরত শুল্ক উত্তোলন কর্মকর্তা মোটর সাইকেলের শুল্ক আদায় করতে আসলে ১০ টাকা দাবি করে। কিন্তু (সওজ) নির্ধারিত শুল্ক ৫ টাকা, ১০ টাকা দাবি করার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়াতে সব যানবাহন ও মানুষ বোঝাসহ শুল্ক ডাবল হয়েছে বলে জানান।
কোদাল ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার ও ফোরকান জানান, কাজের তাগিদে ফেরিতে প্রতিদিন ২/৩ আসা-যাওয়া করতে হয়, অনেক সময় দুই টাকা থাকায় পাঁচ টাকা দিলে কোন টাকা ফেরত দেয় না। প্রথম প্রথম কথা কাটাকাটি করলেও প্রতিদিন তো আর কথা কাটাকাটি করা যায় না তাই বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছি।
এছাড়াও উপস্থিত বেশিরভাগ যাত্রীদের একই অভিযোগ।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুছ ও সাইফুল্লাহ বলেন, প্রায় সময় ফেরি দিয়ে পারাপার করতে হয়, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে কোন রশিদ ছাড়া ১০ টাকা করে ভাড়া আদায় করে।
এছাডাও অনুসন্ধান করে দেখা যায়, যানবাহন ও যাত্রীদের কাউকে রশিদ না দিয়ে শুল্ক আদায় করতে, তবে কারো প্রয়োজনে চেয়ে নিলে রশিদ দেয়।
ফেরি কর্মকর্তা মোঃ শাহাজান কাছে চন্দ্রঘোনা ফেরির শুল্ক আয়ের কোন রশিদ আছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি সড়ক বিভাগীয় প্রতিনিধির স্বাক্ষরিত (মোঃ শাহাজানের স্বাক্ষর) ১০ টাকা শুল্ক আদায়ের একটি রশিদ দেয়। শুল্ক পরিবর্তনের বিজ্ঞপ্তি বা নতুন নির্ধারিত শুল্ক সাইনবোর্ড পরিবর্তন না করে দ্বিগুণ শুল্ক আদায়ের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, “চন্দ্রঘোনা ফেরির ঠিকাদার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবু তাহের কাছে জেনে নিন”।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবু তাহের মুঠো ফোনে বলেন, ফেরি কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান ভুল তথ্য দিয়েছে, তিনি মিথ্যাচার করেছে। এই বিষয়ে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
দ্বিগুণ শুল্ক আদায়ের ব্যাপারে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপদ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আদনান ইবনে হাসান মুঠোফোনে জানান, “উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয় (সওজ) চন্দ্রঘোনা সড়ক উপবিভাগ (রাঙামাটি) এর নির্ধারিত শুল্ক আদায়ের সাইনবোর্ডে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ফেরি কর্মকর্তা যানবাহন ও মানুষ বোঝাসহ নির্ধারিত শুল্ক আদায় করে রশিদ দিবে পরে সেই রশিদ গুলো মাস শেষে অফিসে নিয়ে আসলে আমরা সাইন করি, উনাদের সাথে আমাদের চুক্তিগুলো এভাবে পালন করি”।
উল্লেখিত শুল্ক চেয়ে ডাবল শুল্ক আদায় এবং যানবাহন ও যাত্রীদের কাউকে রশিদ না দেওয়ার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এর যথাযথ ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া বাইক ও অন্যান্য যানবাহন চালকদের উচিত এবং তাদের নাগরিক দায়িত্ব শুল্ক দেওয়ার পর রশিদ আদায় করা।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম)