গাজীপুরে নিট এশিয়া গ্রুপের একটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে ও খোলার দাবিতে শ্রমিকরা অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ করেছে। সোমবার কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুরস্থিত নিট এশিয়া লিমিটেড এর ৩নং ইউনিট কারখানার শ্রমিকরা কারখানার সামনে এ কর্মসূচি পালন করে।
পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুরস্থিত নিট এশিয়া লিমিটেড এর ৩নং ইউনিট কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিদিন দুইঘন্টা করে ওভারটাইমসহ বিভিন্ন দাবী জানিয়ে আসছিল। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস না পেয়ে তারা গত শনিবার (২৮ জানুয়ারি) কর্মবিরতি ও ভবনের চতুর্থ তলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ শুরু করে। এসময় কারখানার এক সুপারভাইজারকে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করেন মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন)। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শ্রমিকরা ওই কর্মকর্তার শাস্তি ও তার অপসারণের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। ওইদাবীতে রবিবার তারা কারখানায় কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। একপর্যায়ে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর নিতাই চন্দ্র সরকার ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় আসে। এসময় তারা কারখানার গেইটে টানানো অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা কারখানার গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) সহ কয়েক কর্মকর্তার অপসারণ সহ বিভিন্ন দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য একই প্রতিষ্ঠানের পার্শ্ববর্তী ২নং ইউনিটের কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের আহবান জানায়। সহকর্মীদের আহবানে সাড়া দিয়ে ২নং ইউনিটের বেশকিছু শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে বিজিএমইএ সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আসেন। তারা মঙ্গলবার বিজিএমই’র ঢাকার দপ্তরে বিজিএমই কর্মকর্তা ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কারখানা মালিক পক্ষের আলোচনার আশ্বাস দিলে বিকেলে আন্দোলনরতরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে কারখানা এলাকা ত্যাগ করে।
কারখানার সহ-মহাব্যবস্থাপক তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়, গত ২৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় চতুর্থ তলায় কর্মরত কিছু উশৃঙ্খল শ্রমিক অহেতুক কাজ বন্ধ করে সমাবেশ করে এবং এতে অন্যান্য ফ্লোরের শ্রমিকরাও অংশ নেয়। এ সময় তারা নানা অযৌক্তিক দাবি জানাতে থাকে। এতে কারখানার উৎপাদন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাদেরকে বারবার কাজে যোগদানের জন্য বলা হলেও তারা বিরত থাকে। পরদিনও তারা ধর্মঘট করে এবং কারখানার কর্মকর্তাদেরকে নানা হুমকি দিতে থাকে। এ কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
এব্যাপারে কারখানার মালিক মোঃ মতিন চৌধুরী জানান, শ্রমিকরা অযৌক্তিক ওভারটাইম দেবার দাবি জানায়। তিনি বলেন, অর্ডার না থাকায় আমাদের এখন অতিরিক্ত কাজ করানো হয় না। আমাদের অর্ডার খুবই কম, আমরা প্রতিদিন গড়ে ছয় ঘন্টা থেকে আট ঘণ্টা কাজ করাই। কিন্তু শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে ওভারটাইম দাবি করছে। তাছাড়া কয়েকজন কর্মকর্তাকে অপসারণ দাবি জানিয়ে কারখানার কর্ম পরিবেশ নষ্ট করছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা কারখানা বন্ধ করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারখানা খুলে দেওয়া হবে।