নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুসারে, রাশিয়াকে মোকাবিলায় ইউক্রেনকে এ পর্যন্ত ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বগণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের এ বিপুল ‘নাগরিক ট্যাক্স’ উড়ানোর তথ্য নিয়েই শনিবার এক মানবিক চিত্র তুলে ধরেছে রুশ সংবাদ মাধ্যম প্রাভদা।
মাত্র একবেলা খাবারের জন্য বিশ্বের প্রতিদিনের ৪ কোটি ৩০ লাখ অভুক্তের নীরব আর্তনাদের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে-‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চাইলেই লাখ লাখ অনাহারির মুখে খাবার তুলে দিতে পারেন। তবে তিনি তা করছেন না-বাধাচ্ছেন যুদ্ধবিগ্রহ। যার ফলে মারা যাচ্ছে আরও মানুষ, বিশ্বে সৃষ্টি হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তা মাথাপিছু ভাগ করলে ইউক্রেনের ৪ কোটি ৩০ লাখ জনগণের মাথাপিছু ভাগ আসে ২ হাজার ৩২৫ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ব্যাপারটি খানিকটা বিলাসিতারই সমতুল্য। কেননা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ইউএসের (ডব্লিউএফপি) জরিপ মোতাবেক বিশ্বে অভুক্ত মানুষের সংখ্যাও ইউক্রেনীয় জনসংখ্যার অনুরূপ, অর্থাৎ ৪ কোটি ৩০ লাখ। যাদের প্রত্যেকের এক বেলার স্বাস্থ্যকর খাবার খরচ পড়ে ০.৪৩ ডলার (৪৫ টাকা)। যা ইউক্রেনে ব্যয়কৃত খরচের চেয়ে এক-দশমাংশেরও কম। তবুও প্রতিদিন না খেতে পেরে মারা যাচ্ছে ২৫ হাজার মানুষ, এদের মধ্যে ১০ হাজারই শিশু। শুধু ভূ-রাজনৈতিক ও অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে ইউক্রেনের প্রতিটি মানুষের পেছনে যে অর্থ খরচ করছে, তা দিয়ে ‘বাঁচানো যেত’ প্রায় ৫৪০০ অভুক্তের প্রাণ। ডব্লিউএফপি বলছে, ‘অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি যে, এই যুগে এসেও খাদ্যের অভাবে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। যাদের মধ্যে ১০ হাজারই শিশু।’ এর অর্থ দাঁড়ায় প্রতি ৪ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ মারা যাচ্ছে না খেতে পেরে। এ অভুক্তরা কারা? বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়া ইউক্রেনীয়রা কিন্তু এ অভুক্তের তালিকায় নেই। খাদ্য না পাওয়া মানুষদের দেশের তালিকায় আছে ভারত, আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। প্রাথমিকভাবে উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-ইয়েমেন, বুরুন্ডি, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং সিরিয়া। এখন প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক- যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ বিলিয়ন ডলার যদি ক্ষুধার্ত মানুষদের দেওয়া হতো তবে কি হতো? অভুক্তদের প্রতি বেলার খাবারের খরচ যদি ০.৪৩ ডলার হয় তবে ৪৩ মিলিয়ন মানুষ বছরে ৩৬৫ দিন চলতে প্রয়োজন হতো প্রায় ৬.৭৫ বিলিয়ন ডলার! অর্থাৎ মার্কিন সরকার ইউক্রেনে যা পাঠিয়েছে তার ১০ ভাগের ১ ভাগেরও কমে বেঁচে যেত ৪৩ মিলিয়ন মানুষ! অথচ মানুষ বাঁচানোর বদলে হত্যাকেই বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্র কেনার জন্যই এর চেয়ে দশগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। আর এসব অর্থায়নে যারা সমর্থন করেছেন ইতিহাসে হয়তো তারাও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তারা হলেন, ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রিপাবলিকান সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল, নিুকক্ষের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও রিপাবলিকান প্রতিনিধি লিজ চেনি।
Shares
facebook sharing button Share