টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রান মুসলমানের কন্ঠে আমিন আল্লাহুমা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাতে মহান আল্লার কাছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ্ ভিক্ষা করছিলেন মুসুল্লীরা। ক্ষমা লাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনা করা হয় তাবলিগ জামাতের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত। এরআগে হেদায়েতী বয়ান করা হয়। আলেম ওলেমা কওমীপন্থী মাওলানা জোবায়ের অনুসারী প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বের মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তাবলীগ অনুসারীদের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। সোমবার মাগরিবের পূর্বে জোবায়ের অনুসারীরা ময়দান ত্যাগ করবেন এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে ময়দানের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে মাওলানা সা’দ অনুসারীরা ময়দানে প্রবেশ করবেন এবং দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার জন্য প্রস্তুতি নিবেন।
বিশ্ব তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের তাবলীগ মারকাজের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আহমদ ছোট ছোট বাক্যে আরবী-উর্দু ও বাংলা ভাষায় ২৩ মিনিট ব্যাপী আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমার এ পর্বের আখেরী মোনাজাত পরিচালনার দায়িত্ব পরে তার উপর। তিনি বেলা ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে মোনাজাত শুরু করেন এবং তা চলে বেলা ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত। পবিত্র কোরআনের আরবী আয়াত এবং বাংলা ও উর্দু ভাষায় ২৩ মিনিট ব্যাপী মোনাজাত মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোনাজাত শুরু হতেই পুরো এলাকা জুড়ে নেমে আসে পিন পতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। খানিক পর পর শুধু ভেসে আসে আমিন, ছুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন। অনুতপ্ত মানুষের কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে অনুনয়-বিনয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পানাহ ভিক্ষা করছিলেন তাঁরা। ক্ষমা লাভের আশায় ধনী-গরীব-শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনার মধ্য দিয়ে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে রবিবার। এবারের প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে সংশি¬ষ্ট সূত্রের ধারণা।
এদিকে, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার ভোর রাত থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা অভিমুখে শুরু হয় বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো মানুষের ঢল। টঙ্গীর পথে শনিবার মধ্যরাত থেকেই ইজতেমা ময়দানগামী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোটর গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মোনাজাতে অংশ নিতে চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসুল্লী পায়ে হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন। মোনাজাতের আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ায় মুসুল্লীরা মাঠের আশে-পাশের রাস্তা,অলি-গলিতে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছুতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোনাজাতের জন্য পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসুল্লীরা অবস্থান নেন। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ আর মানুষ। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৪-৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রবিবার আশে-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠান ছিল ছুটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।
এবারের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে এবং মুসল্লীদের সেবায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশ এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেন। টঙ্গীর সড়ক দ্বীপগুলোতে ইসলামিক ভাবধারায় ১৮টি তোরন নির্মান করে মুসল্লীদের স্বাগত জানানো হয়। এসব তোরণে সচেতনতা মূলক বিভিন্ন শ্লোগানও লেখা ছিল। প্রায় ৬ হাজার এলইডি লাইটের আলোয় রাতের ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশ এলাকা ছিল দৃষ্টিনন্দনে ভরপুর। টঙ্গী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল হাসান রাসেল এ প্রসঙ্গে জানান, দেশী বিদেশী মুসল্লীদের কাছে বর্তমান সরকারের ইজতেমার ব্যাপক আয়োজন ফুটিয়ে তুলতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শেষ দিনে বয়ানকারী ॥ তাবলীগ জামাতের সূরা সদস্য মাওলানা ফপারুক হোসেন জানান, রবিবার বিশ্ব তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্বের শেষদিন সকাল হতে আখেরি মোনাজাত শুরু পর্যন্ত হেদায়াতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান। তিনি তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে মুসুল্লীদের উদ্দেশ্যে হেদায়তি বয়ান করেন। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। এসময় ইজতেমাস্থলে আগতরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সেসব বয়ান শুনেন। তবে এদিন হেদায়েতঅ বয়ানের আগে আর কোন বয়ান হয় নি।
মোনাজাতে যা বলা হয় ॥ মাওলানা জুবায়ের মোনাজাতে বলেন, হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তৌফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো। হো আল্লাহ আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেন। গোপন গুনাহ, প্রকাশ্য গুনাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। এ বিশাল ময়দানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যার হাতকে আপনার পছন্দ হয় তার উছিলায় আমাদের সবার মোনাজাত কবুল করে নেন। আমাদের জিন্দিগি গুনাহ মুক্ত হওয়ার তৌফিক দেন। দুুনিয়ার সব নর-নারীর জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন। হে আল্লাহ ইমানের হাকিকতে তামাম নসিব করে দেন। হে আল্লাহ ঈমানী সিফাত আমাদের মধ্যে পয়দা করে দেন। হে আল্লাহ আমাদের ঈমানী জিন্দেগি নসিব করে দেন। হে আল্লাহ আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে দেন।
মোনাজাত শেষে বিষ্ময়কর মানব, যানজট ॥ মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া লক্ষাধিক মানুষ ভীড় ঠেলে একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে ইজতেমা ময়দান এলাকার কামারপাড়া রোডে সৃষ্টি হয় বিষ্ময়কর দীর্ঘ মানবজট। ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকা হতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া লাখ লাখ মুসুল্লীর প্রচন্ড ভীড়ের কারনে ইজতেমা ময়দান এলাকার কামারপাড়া সড়কের দু’পাশের সংযোগ মোড়ে মানব জটের সৃষ্টি হয়। বিষ্ময়কর এ মানব জটে আটকা পড়ে মুসুল্লীদের ভীড়ের মাঝে দীর্ঘ সময় একইস্থানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মানব জট ছাড়াতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমসিম খেতে হয়। এসময় অনেকের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন মালামাল খোয়া যায় এবং কয়েকজন আহত হয়। পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য সেখানে পৌছে দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর মানবজট ছাড়াতে সামর্থ হন।
প্রায় একই কারণে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের আশে-পাশের সড়ক-মহাসড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় যানজট। ফলে যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক মুসল্লী ইজতেমা ময়দান থেকে বের হয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আর পাঁয়ে হাঁটা মুসুল্লীদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসুল্লীদের যানবাহন রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থাকে ইজতেমা মাঠের আশে-পাশের এলাকায়।
ইজতেমা মাঠ থেকে ঢাকার সরাসরি কোনো গণপরিবহন নেই। উপায় না দেখে অনেকে হেঁটেই রওনা হন বাড়ির উদ্দেশ্যে। আবার কেউ কেউ কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে প্রাইভেটকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যান ভাড়া করেন। যারা ইজতেমা মাঠে পৌছতে না পেরে স্টেশন রোড, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, উত্তরা কিংবা বিমানবন্দরের বিভিন্ন এলাকায় থেকে মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন, তারাও একই সময় ফেরা শুরু করেন। ফলে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বনানীমুখী সড়ক জন¯্রােতে পরিণত হয়, তাদের বেশির ভাগই হেঁটে ফিরছিলেন। পাশাপাশি বাস, মিনি ট্রাক, ঠেলা গাড়িতে করে যে যা পাচ্ছেন ওই গাড়িতে চড়ে বাি রিছেন। তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই ট্রেনগুলোতেও।
এ পর্বে ৮ মুসুল্লীর মৃত্যু ॥ রবিবার আখেরী মোনাজাত শুরু আগে সকালে ঢাকা বংশালের কাজী আলাউদ্দিন রোড এলাকার বাসিন্দা আনিস (৭১) নামের এক মুসুল্লী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। এনিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে আসা ৮জন মুসল্লি হৃদরোগ ও বার্ধক্য জনিত কারণে ইজতেমা ময়দানে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার মাওলানা মোহাম্মদ শাকের।
টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ॥ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ছিল। ফলে এবার এসব কারখানার শ্রমিকদের ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সমস্যা হয়নি।
টেলিভিশন-মুঠোফোন ও ওয়্যারলেস সেটে মোনাজাত ॥ ইজতেমা মাঠে না এসেও মোনাজাতের সময় হাত তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। টঙ্গীর ইজতেমাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে গত কয়েকবারের মতো এবারও গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদের মাইকে আখেরী মোনাজাত সম্প্রচার করা হয়। এখানে কয়েক হাজার নারী পুরুষ ঈদগাহ মাঠে এবং পার্শ্ববর্তী সড়কে ও ভবন গুলোতে জড়ো হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। এছাড়াও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় টেলিভিশন, ওয়্যালেস সেট ও মুঠোফোনের মাধ্যমে মোনাজাত প্রচার করা হয়। এসব স্থানেও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। আবার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করার কারনে অনেকে বাসায় বসে মোনাজাতে অংশ নিয়েছে। এছাড়াও দেশ বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে ইজতেমাস্থলে অবস্থানকারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেও মোনাজাতে শরীক হয়েছেন।
মুসল্লিদের জন্য ট্রেন ও শাটল বাস ॥ আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে যেতে ও মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন শনিবার মধ্যরাত হতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার হতে কামারপাড়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে ওই এলাকায় মুসল্লীদের সুবিধার্থে ময়দানমুখী শাটল বাস চলাচল করেছে। আখেরী মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা এ শাটল বাসে যাতায়ত করে। মোনাজাত শেষে টঙ্গী থেকে সবার বাড়ি ফেরার সুবিধার জন্য বেশ কয়েকটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রথম পর্বে দু’সহ¯্রাধিক জামাত তৈরী ॥ বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটি সূত্রে জানাগেছে, বিভিন্ন দেশে তাবলীগের কাজে বের হতে এবার এজতেমা স্থলে প্রথম পর্বে দু’সহ¯্রাধিক জামাত তৈরী হয়েছে। এরমধ্যে দেশীয় জামাত হয়েছে প্রায় দু’হাজার এবং প্রায় ৮শ’ বিদেশী জামাত হয়েছে। এসব জামাতে কেউ কেউ এক চিল্লা, দু’চিল্লা, তিন চিল্লা, ছয় চিল্লা ও একবছরের চিল্লা এমনকি আজীবন চিল্লার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। আগামি ১৫-২০ দিনে মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
বিদেশী মুসুল্লী ॥ রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, চাঁদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্থান, খিরগিজস্থান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্দান ও দুবাইসহ বিশে^র অর্ধশতাধিক দেশের দেড় সহ¯্রাধিক মুসল্লী অংশ নেন। তা’ছাড়া এপর্বে দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মূসল্লীরা এজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে গাজীপুরে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে ।
মোনাজাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ॥ আখেরী মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিপুল সংখ্যক নারী। ইজতেমায় নারীদের অংশ নেওয়ার বিধান না থাকলেও এসব নারীদের অধিকাংশই আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে অবস্থান নেন। এছাড়াও ভোর থেকে নারীরা ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের মাঠ, ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশে কামারপাড়া ও আশপাশের খোলা ময়দানে অবস্থান নেন। তারা স্বস্ব অবস্থানে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন।