বাগেরহাট থেকে রুহুল আমিন বাবুঃ
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী পরিবার। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে অশ্রুশিক্ত নয়নে এক অসহায় পিতা-মাতা তাদের মেয়ে বিথি আক্তার ( ২২) হত্যার বিচার দাবি করেন। ভুক্তভোগী পরিবারের ভাষ্যমতে বিথি আক্তার ২০১৮ সালে এসএসসি পাশ করে দৈব্যজ্ঞহাটি সেলিমাবাদ কলেজে ভর্তি হবার পর ৬নং চিংড়াখালী ইউনিয়নের কাচিকাটা গ্রামের শহিদুল শেখের পুত্র আবির শেখ( ২৫)সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কলেজে ভর্তি হওয়ার ৬ মাস পর থেকে ছেলে এবং ছেলের পরিবার বিভিন্ন ভাবে বিবাহের প্রস্তাব দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ছেলের বাবা শহিদুল ইসলাম আমার গ্রামের লোকজন নিয়ে আমার স্বামীর উপস্থিতিতে আমার বাড়িতে এসে মেয়ে বিয়ে দেবার জন্য চাপ দিতে থাকে। আবিরের পরিবার বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকলে আমরা মেয়ের পরীক্ষার শেষে বিয়ে দিতে সম্মত হই। পরবর্তীতে গত ৮ মার্চ ২০২১ সালে উভয় পরিবারের আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে কাবিন রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে হয়।বিয়ের এক মাস পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েকে উঠিয়ে দেই। বিয়ের পর থেকে আবিরের মা আম্বিয়া বেগম আমার মেয়ের উপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে যৌতুক না পেয়ে দোষারোপ করে মানষিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।নির্যাতন এক পর্যায়ে মারাত্মক হয়ে পড়লে ছেলে আমার মেয়েকে বগুড়া তার কর্মস্থলে নিয়ে যায় । বগুড়ায় কিছুদিন থাকার পরে আবির পুনরায় তার স্ত্রী বিথিকে তার মায়ের কাছে রেখে আবার কর্মস্থলে চলে যায়।ভুক্তভোগী মায়ের দাবি তার মেয়ের মোবাইল ছেলে তার নিজের কাছেই রাখত। আমার মেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারতো না। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য জীবনে ঝামেলা লেগেই থাকতো।গত ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার রাত অনুমান রাত ৯:৩০ টায় ছেলের মামি আমাকে ফোন দিয়ে বগুড়ার খবর জানতে চায়, কিন্তু আমি কিছুই জানি না বলে জানালে সে আমাকে জানায়, ‘আপনার মেয়ে আত্ম হত্যার চেস্টা করেছে। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন’। তারপর আমি ছেলেকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করে কেটে দেয়। এরপরে আবিরের মামা বগুড়া একটি অভিজাত হোটেল ক্যাস্টেল সোড( Hotel castle soad) এর মালিক দেলোয়ারের সাথে কথা হয়। আবির তার মামার হোটেলেই চাকরি করেন। আবির তার স্ত্রীর লাশ ফেলে পালিয়ে যান। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে র্যাব ও থানা পুলিশের সহযোগীতায় মেয়ের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে ফেলে রাখা অবস্থায়
একটি রুমের ভিতর থেকে উদ্ধার করি। এ সময়ে লাশের সমস্ত কাপড় চোপড় রক্তে ভেজা দেখতে পাই। মেয়ের বাম কানসহ গালের উপর ভারি আঘাতের কারণে রক্তমুখো কালো দাগ, পাজরের দুই পাশের হাড়ে ভারি কোনে জিনিসের আঘাতে কালো দাগ, দুই রানের বাহির পাশে শক্ত লাঠির আঘাতের কালো দাগ এবং বাম হাতের
আঙ্গুলের মাথা থেতলে রক্ত বেরিয়ে আসে অবস্থায় দেখে আমরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরবর্তীতে মেয়ের লাশ কিভাবে বাড়িতে নিয়ে আসি।আবিরের পরিবার জোরাজুরি করে আমার মেয়েকে প্রেমের জালে বন্দী করে শুধু যৌতুক না পাবার আক্রেশে আমার মেয়েকে ছেলে এবং তার মা মিলে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করে, সর্বশেষ ছেলেই আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
আবিরের মামা দেলোয়ার হোসেন এই চক্তান্তে জড়িত বলে দাবি বিথির পরিবারের। উল্টো দায় এড়াবার জন্য আত্মহত্যার কথা প্রচার করছে। এমতাবস্থায়, সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সরকারের কাছে বিথি হত্যার বিচার চাই। ।এ ব্যাপারে বিথির শশুর শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনার কথা শুনে বগুড়ায় যাই। গিয়ে শুনি
বিথির লাশ নিয়ে বাড়ী চলে গেছে। পরে আমিও চলে আসি। কিন্তু আমার ছেলে আবিরের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। এ ব্যাপারে আবিরের মামা ও হোটেল মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সংবাদ শুনে হাসপাতালে গিয়ে দেখি বিথির মরা দেহ পড়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালে পুলিশের গাড়ি ঢুকলে আবির পিছন থেকে পালিয়ে যায়।
তারপর থেকে আমার সাথে আবিরের কোন যোগাযোগ নেই। মৃত্যুর দুইদিন পূর্বে আমার এখান থেকে ছুটি নিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার এখানে আসেনি। এর বেশী কিছু আমি জানিনা।