শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় জাতীয় সংগীতের সুরে সুরে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে সান্ধ্যকালীন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়।কোরআন তেলাওয়াত ও বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। তেলাওয়াত ও দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা তাজুুল ইসলাম।।এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মিশনের এর কন্সুলার সহকারী,মোঃ ইবাদ উল্লাহর সঞ্চালনায়।এ সভায় রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন।মিশনের দ্বিতীয় সচিব মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন,মিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম,পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন, মিশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মিজ শিরিন ফারজানা।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বানী পাঠ করেন কল্যাণ সহকারী আল মামুন পাঠান।
আলোচনা সভার শুরুতে মিশনের দূতালয় প্রধান মোঃ সোহেল পারভেজ স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের সূর্য সন্তান বীর মুক্তি যোদ্ধাদের স্মরন করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, মহান বিজয় দিবস জাতীয় জীবনে এক অনন্য গৌরবময় দিন। বিজয়ের এ মহান দিনে সেইসব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধা জানাই। যারা দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম ত্যাগ ও বীরত্বগাথা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আজ কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধা বেদনায় স্মরণ করছে দেশের পরাধীনতার গ্লাানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় অর্জনের ইতিহাস শুধু ১৯৭১ সালে সীমাবদ্ধ নয়। ইস্পাত কঠিন ঐক্যে দৃঢ় জাতির দীর্ঘ সংগ্রাম আর ত্যাগের সুমহান ফসল এ বিজয়। এ বীরত্বগাথা বিজয়ের সত্যিকারের ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। তা না হলে বর্তমান অপপ্রচারের সময়ে নতুন প্রজন্ম সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে ওঠা অত্যন্ত কঠিন হবে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় রেমিট্যান্সের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডিসহ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার পাশাপাশি প্রবাসীদের সচেতনতার ওপর সরকার জোর দিয়েছে। এছাড়া হুন্ডি প্রতিরোধ ও প্রবাসীদের সচেতন করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করছে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, সারা বিশ্বে পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। সেই মর্যাদার জায়গা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়তে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
মালদ্বীপের প্রবাসীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার আহ্বান জানান হাইকমিশনার এস এম আবুল কালাম আজাদ ।
এছাড়া বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে তৃতীয় বারের মতন সিআইপি নির্বাচিত হওয়ায় মালদ্বীপের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মোহাম্মদ সোহেল রানাকে অভিনন্দন জানান হাইকমিশনার।
বিজয় দিবসে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ হতে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. জেবা উন নাহার ও ন্যাশনাল ব্যাংক মানি ট্রান্সফার মালদ্বীপ এর সিইও মাসুদুর রহমান। তারা দেশের ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন উন্নয়ন ও বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণের বিষয়ে গুরত্বারোপ করেন। পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়নমূলক প্রামাণ্য চিত্র এবং হাই কমিশনের গত এক বছরের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের উপর স্লাইড প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশি চিকিৎসক ডাঃ মুক্তার আলী লস্কর,মিশনের এর কন্সুলার সহকারী,ময়নাল হোসেন, মালদ্বীপ আওয়ামীলীগের সভাপতি, দুলাল মাতবর, ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন, ন্যাশনাল ব্যাংক মানি ট্রান্সফার মালদ্বীপ এর লোকাল ডাইরেক্টর হান্নান খান কবির, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী,মজিবুর রহমান, মনির হোসেন,জাকির হোসেন, বাবুল হোসেন, হাদিউল ইসলাম, সহ
মালদ্বীপের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও কমিউনিটি নেতারাসহ কমিশনের কর্মকতারা। মালদ্বীপের মালেতে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ও মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নৈশ ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশ করেন,নীল দরিয়া শিল্পী গোষ্ঠী।
এর আগে, দুপুর দুইটায়, মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশন এর উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশী টিম ও মালদ্বীপ ন্যাশনাল টিম এর মধ্যে একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় । মালদ্বীপের মালের জাতীয় একুভেনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আয়োজন করেন প্রবাসীদের জন্য প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ।
প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা দুটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনার ক্রিকেট দল ও মালদ্বীপ ন্যাশনাল ক্রিকেট দল, এই দুই দলের মধ্যে বৃষ্টি বিঘ্নিত খেলায় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় ৯ উইকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরভ অর্জন করেন মালদ্বীপের জাতীয় ক্রিকেট দল।
বিজয় দিবসের প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ টুর্নামেন্টের ক্লাব সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মালদ্বীপের পররাষ্ট্র সচিব বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,জাপানি রাষ্ট্রদূত, চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ও ইউএই আন রেসিডেন্স সমন্বয়কারীর চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স এবং দূতাবাসের প্রথম সচিব শ্রম মো. সোহেল পারভেজ ও ডক্টর মুক্তার আলী লস্কর সহ প্রবাসী কমিউনিটির নেতারা।
খেলা শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মালদ্বীপের ন্যাশনাল ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন আদাম নাসিফ এর হাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রপি তুলে দেন বাংলাদেশ হাইকমিশনার ও মালদ্বীপের পররাষ্ট্র সচিব। রানার্সআপ বাংলাদেশ হাইকমিশনার ক্রিকেট দলের পুরস্কার গ্রহণ করেন ক্যাপ্টেন বাবুল হোসেন। এবং ম্যান অবদ্য ফাইনাল হন মালদ্বীপের জাতীয় দলের মালিনদা।
এছাড়াও মহান বিজয় উপলক্ষে বাংলাদেশি নাগরিক ভিউ কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড এবং ভিউ স্পোর্টস ক্লাব এর চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন মালদ্বীপ প্রবাসীদের ১৬টি ক্লাব টিম নিয়ে, মালদ্বীপের জাতীয় একুভেনী ফুটবল প্রেকটিস মাঠে ।ভিউ স্পোর্টস ক্লাব ফুটসাল কাপ-২০২২, ফুটবল খেলার আয়োজন করেন।
(১৬ই ডিসেম্বর) শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫ টা নাগাদ চলা এই ফুটবল লীগে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য দলগুলিকে হারিয়ে দিয়ে (সিলেট এস এস) বিজয় এনে বিজয়ের দিনে মালদ্বীপ প্রবাসীদের ও দেশের জন্য সম্মান অর্জন করেছেন।
উক্ত খেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ডক্টর ইবরাহীম হোসাইন ও প্রবাসী ডক্টর মুক্তার আলী লস্কর। তারা পরে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মোহাম্মদ মাহামুদুল মালদ্বীপ প্রতিনিধি