পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে পিটিআই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে দেশটির সাবেক সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইমরান খানের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল। এমনকি পাকিস্তানের সদ্য সাবেক সেনাপ্রধান বাজওয়াকে লক্ষ্য করে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এই তারকা ক্রিকটার। -দ্য নিউজ

তবে সময় বদলেছে, সঙ্গে বদলেছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানও। বাজওয়ার জায়গায় নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জেনারেল আসিম মুনির। এরপরই বেশ সতর্ক ইমরান। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও নতুন সেনাপ্রধানের সমালোচনা না করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিটিআই নেতাদের ও দলীয় সোশ্যাল মিডিয়া টিমকে সেনাবাহিনী এবং নতুন সিওএএস জেনারেল আসিম মুনিরের সমালোচনা না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

পিটিআইয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ইমরান খান দলীয় নেতাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এবং পিটিআই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের এই নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘দয়া করে নিশ্চিত করুন যে, নতুন সেনাপ্রধান এবং সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে যেন আর কোনও সমালোচনা না হয়।’ ইমরান খানের এই দিকনির্দেশনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চলে আসা অস্থির সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য দলীয় প্রচেষ্টার স্পষ্ট লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে। পিটিআইয়ের দলীয় ওই সূত্রটি বলেছে, জেনারেল আসিম মুনিরকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগের পর এখন ইমরান খানও চান না যে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার এবং জেনারেল আসিম মুনিরের মধ্যে যা ঘটেছিল তার প্রতিফলন ঘটুক।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পিটিআইয়ের সিনিয়র নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী দলীয় নেতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া টিমকে ইমরান খানের সর্বশেষ নির্দেশনাটি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেননি। তবে তিনি বলেন, আমাদের দলের নীতি হচ্ছে- সামরিক বাহিনীর সাথে দ্বন্দ্ব নয়। ফাওয়াদ চৌধুরী স্বীকার করেছেন, অতীতে (সামরিক বাহিনীর) নির্দিষ্ট ব্যক্তি এবং তাদের নীতির সঙ্গে পিটিআইয়ের সমস্যা ছিল। তিনি বলেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর সাথে আমাদের কখনোই কোনো সমস্যা ছিল না।

এর আগে গত বুধবার ইমরান খান এক টুইট বার্তায় জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে নতুন সিজেসিএসসি এবং জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরকে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে অভিনন্দন জানান। সেখানে ইমরান আশা প্রকাশ করেন, ‘নতুন সামরিক নেতৃত্ব জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে গত ৮ মাসে তৈরি হওয়া বিরাজমান আস্থার ঘাটতি দূর করতে কাজ করবে। রাষ্ট্রের শক্তি জনগণের মাধ্যমেই উদ্ভূত হয়।’ একই টুইটে ইমরান খান পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটি উক্তি শেয়ার করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ভুলে যাবেন না, সশস্ত্র বাহিনী জনগণের সেবক এবং আপনি জাতীয় নীতি তৈরি করেন না; আমরা, বেসামরিক ব্যক্তিরা এই বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিই এবং সেগুলো সম্পাদন করা আপনার দায়িত্ব।’

এদিকে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার দলের নেতাদের পাশাপাশি দলটির সোশ্যাল মিডিয়া টিম গত আট মাস ধরে যা প্রচার করছে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের পর সে বিষয়ে বেশ বড় নীতিগত পরিবর্তন এনেছে ইমরান ও পিটিআই। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইমরান খান দেশটির সামরিক বাহিনীকে কঠোরভাবে আক্রমণ করেছেন। এমনকি তার সরকারকে অপসারণের জন্য সরাসরি সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই তারকা ক্রিকটার।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ক্ষমতা হারানোর পর গত ৮ মাসে পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া টিম দেশটির সামরিক বাহিনী, শীর্ষ সেনা কমান্ডকে লক্ষ্য করে অসংখ্য প্রচারণা চালায়। এসব প্রচারণায় অশালীন ভাষাও ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি কিছু পিটিআই নেতা সামরিক বাহিনী এবং এর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অশালীন ভাষা ব্যবহার করেছেন। সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ইমরান খান প্রথমে জেনারেল আসিম মুনিরকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি তার নীতি পরিবর্তন করেন এবং বলেন, সিওএএস (সেনাপ্রধান) যাকেই করা হোক না কেন তাতে তার কোনও আপত্তি থাকবে না। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ইমরান খান দেশটির প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধানের পদ থেকে আসিম মুনিরকে অপসারণ করেছিলেন।