চরম বিশৃঙ্খলার একটা উদাহরণ হয়ে থাকলো ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের যৌথ সম্মেলন। অতিথির বক্তব্য দিতে না দেওয়ার নতুন নজির স্থাপন করলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের বিদায়ী সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হ্রদয়। তারা দীর্ঘ এক ঘণ্টা নিয়ে বক্তৃতা করায় সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছাড়া কেউই বক্তৃতা করতে পারেননি। ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চ ছেড়েছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চারনেতা।

মঞ্চ জুড়ে ছিল চরম বিশৃঙ্খলা। কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না বিদায়ী কমিটির হাতে। চরম বিশৃঙ্খল এই কমিটির নেতারাও আসতে চান ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সমালোচনা করে বলেন, ‘এটা কি ছাত্রলীগ? কোনো শৃঙ্খলা নেই।

জয়-লেখক (ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) এটা কী ছাত্রলীগ। পোস্টার নামাতে বললাম তারা নামায় না। এরা কারা আমি খোঁজ নিচ্ছি। এতো নেতা স্টেজে, তাহলে কর্মী কোথায়?’
ঢাকা মহানগরের এই সম্মেলন সকাল ১০টায় উদ্বোধনের কথা থাকলে ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়।

দীর্ঘ এক ঘণ্টায় মহানগরের বিদায়ী কমিটির চারনেতা বক্তৃতা করেন। দুপুর ১২টায় মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন এখন বক্তব্য রাখবেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। কিন্তু শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজের কারণে প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন।
ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজকদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চ ছাড়েন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চারনেতা।

তারা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। এছাড়া বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি আমন্ত্রিত অতিথি আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মদ মোহাম্মদ মান্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
এসময় ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চারনেতা মঞ্চ ত্যাগ করেন। এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের শাসিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার খাঁটি কর্মী বিশৃঙ্খলা করে না। সব নেতা হয়ে গেছে। কতজন নেতা? আজকে নানকের মতো, আপনাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, সাবেক মন্ত্রী, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান সময়ের অভাবে বক্তৃতা দিতে পারলো না। আপনারা মাইক ধরলে ছাড়েন না। পরে কে বলবে খেয়াল থাকে না। আজকে জুমার দিন খেয়াল রাখে না। এই ছাত্রলীগকে আমরা চাই না। সুশৃঙ্খল করুন, সুসংগঠিত করুন। যে ছাত্রলীগ কথা শুনবে না তাদের দরকার নেই। অপকর্ম করবে এমন ছাত্রলীগ চাই না। দুর্নামের ধারা থেকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই আজকের অঙ্গীকার।

তিনি বলেন, বাহাউদ্দিন নাছিম আছেন, কারা নির্যাতিত নেতা। আমাদের বর্তমান জয়েন্ট সেক্রেটারি বক্তৃতা করতে পারেননি। আমন্ত্রিত অনেকেই, আজকে মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কেউ বক্তৃতা দিতে পারেননি। তারা বক্তা ছিলেন। আমাদের দফতর বিপ্লব বক্তব্য দিতে পারেননি। তাহলে দাওয়াত দিলেন কেন? একটু একটু করে বলতে পারলো না? আপনারা দুই জনেই একঘণ্টা, মনে নাই আজকে শুক্রবার। লেখকের না হয় মনে নাই জয়ের কী মনে নাই। এটা কোন ছাত্রলীগ? বন্ধ করেন। যার নামে স্লোগান দিবেন তাকে বানাবো না। স্লোগান যার নামে হবে সে বাদ। সে বাদ বলে দিচ্ছি।

কাদের বলেন, এটা কি ছাত্রলীগ? কোনো শৃঙ্খলা নেই। জয়-লেখক (ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) এটা কী ছাত্রলীগ। পোস্টার নামাতে বললাম তারা নামায় না। এরা কারা আমি খোঁজ নিচ্ছি। এতো নেতা স্টেজে, তাহলে কর্মী কোথায়? এই ছাত্রলীগ চাই না। শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ এই ছাত্রলীগ না। মুজিব কোট পরলেই মুজিব সৈনিক হওয়া যায় না। মুজিব সৈনিক হতে হলে মুজিবের আদর্শের সৈনিক হতে হবে।