রাত পোহালেই শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। সময়ের হিসাবে ২৪ ঘণ্টাও নেই। নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) সমাবেশের আমেজ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে। একদিন আগেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সমাবেশে রূপ নিয়েছে। শুক্রবার সুর্যাস্তের আগেই হাজার হাজার নেতাকর্মীর শ্লোগানে মুখরিত ওই এলাকা। কানায় কানায় ভরে গেছে বিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যান। আগত নেতাকর্মীদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন।

বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীদের একের পর এক মিছিল প্রবেশ করছে সমাবেশের মাঠে। ব্যানার-ফেষ্টুনের পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার ছবিসহ স্থানীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত প্লাকার্ড নিয়ে মিছিল নিয়ে আসছেন তারা। সবমিলিয়ে এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে।

শুক্রবার বিকালে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়-বঙ্গবন্ধু উদ্যান লোকারণ্য। মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথ দিয়ে একের পর মিছিল ঢুকছে। পিঠে তাদের কাপরচোপরের ব্যাগ। রাতে থাকতে হবে মাঠে। সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে তারা। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ভোলা জেলা বিএনপি সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের নেতৃত্বে বিশাল একটি মিছিল দক্ষিণ দিকের পথ দিয়ে মাঠে প্রবেশ করে।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী হাসান নামক বোরহানউদ্দিন উপজেলার এক বিএনপিকর্মী জানান, লঞ্চ বন্ধ থাকায় তারা একত্রে আসতে পারেননি। বিভিন্ন উপায়ে ট্রলারে বরিশালে পৌঁছেছেন। নগরের মধ্যে একত্রিত হয়ে মিছিল করে সমাবেশ মাঠে পৌঁছান তারা। এভাবে পিরোজপুর, বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা একের পর মিছিল নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করছে।

দক্ষিণাঞ্চলে প্রকৃতিতে এখন মৃদু শীতের আমেজ। সেটাও উপেক্ষা করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। যাদের মধ্যে অনেকেই আছে বয়োবৃদ্ধ। তারাও বিএনপির সমাবেশে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মাঠে অবস্থান করছেন। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন তারা। এদের মধ্যে অনেকে প্রত্যক্ষভাবে দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নন। তাদের মধ্যে একজন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ফজলুল হক (৭০)। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল থেকে যানবহন বন্ধ হয়ে যাবে, তাই বৃহস্পতিবার রাতেই সমাবেশের মাঠে এসেছেন তিনি। দুইরাত মাঠে কাটাবেন তিনি।

সরকারের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, কৃষকদের কৃষি করতে বলেন এই সরকার। কিন্ত সারের কেজি ২৮ টাকা। যা আগে ছিল ১২টাকা। লবনের কেজি ২৫ টাকা। যে লবন গরুতেও খায়না। আটার কেজি ৬০ টাকা। চিনির কেজি ১১০ টাকা হলে বাজারে পাওয়া যায়না। ‘ওরা (সরকার) আমাদের মারতে চায়, এর প্রতিবাদে বিএনপির জনসভায় অংশ নিয়েছি’।

শুধু বরিশাল অঞ্চল নয়, দলের টানে দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নেতাকর্মী এসেছেন বরিশালে। তাদেরই দুইজন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আসা দুই বিএনপি নেতা মামুনর রশিদ ও ইমাম হোসেন। তারা জানান, পরিবহন বন্ধ হযে যাবে তাই বৃহস্পতিবার বরিশালে পৌঁছেছেন। গাইবান্ধা জেলা মহিলা দলের দুই নেত্রীর মাথায়ও দলীয় ব্যান্ড বেঁধে মাঠ চষে বেড়াতে দেখা গেছে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক জানান, জেলার নদীবেষ্টিত এলাকার নেতাকর্মীরা আজ মধ্যরাতের মধ্যে ট্রলারে বরিশালে পৌছবেন। মহানগর ও সদর উপজেলাসহ ঝালকাঠী এলাকার হাজার হাজার নেতাকর্মী শনিবার দুপুরের মধ্যে সমাবেশ মাঠে পৌঁছাবেন। সব বাধা পেরিয়ে সমাবেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবেন। মাঠ উপচে আশপাশের সড়কও লোকারন্য হয়ে যাবে বলে জানান এই নেতা।