টান-টান উত্তেজনা কাকে বলে সেটা আজ বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের ম্যাচে বোঝা গেছে। ১ বলে ৫ রান দরকার জিম্বাবুয়ের। বল হাতে স্পিনার সৈকত আক্রমণে। ছক্কাও হতে পারত বা বাউন্ডারিও হতে পারত। প্রচন্ড মানসিক চাপে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জয়ের আনন্দ করছে।

ঠিক তখনই আসে বিপদের সংবাদ। শেষ বলটা নো হয়েছে। এর মানে আউট তো হয়নি, বরং ১ বলে ৪ রান করতে পারলে জিম্বাবুয়ে জিতে যাবে! ফ্রি হিট পেয়ে গেছে। কিন্তু তাতে কাজ হলো না, রেগে থাকা সৈকতের বল ব্যাটে লাগাতেই পারেনি জিম্বাবুয়ের ৯ম ব্যাটার। শেষ অবদি ৩ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। নাটকে ভরা এক টি২০ ম্যাচে জয় পেল বাংলাদেশ।

চলতি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানে হারের পর জিম্বাবুয়ে ১ রানে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিলে
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খানিকটা ভড়কে যাবারই কথা। তার সঙ্গে কয়েক মাস আগেই তো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টি২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরে ছিল বাংলাদেশ! কিন্তু টি২০ ম্যাচে কে যে কখন দাঁড়িয়ে যায় সেটা বলা আগাম সম্ভব না। এরই প্রমাণ আজ টস জিতে আগে ব্যাট করে ১৫০/৭ জমা করে টাইগাররা। জবাবে জিম্বাবুয়ে ১৪৭/৮।

আজ জয়টা প্রচন্ড দরকার ছিল সাকিবদের জন্য। এই বিশ্বকাপের সেমিতে খেলাটা স্বপ্ন মনে হলেও, আগামী টি২০ বিশ্বকাপের আসরে সরাসরি খেলার যোগ্যতার জন্য জয় ছিল জরুরী। কারণ এ আসরে সুপার-১২ এর সেরা ৮ দলই আগামী আসরে সরাসরি খেলবে।

আজ জয়টাতে বাংলাদেশ পয়েন্ট টেবিলে ৮ দলের মধ্যে থাকার একটি সম্ভাবণা তৈরি করেছে। যদিও এ আসরে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ভূমিকা ছিল নেতিবাচক। আজই প্রথম দল প্রথম ফিফটির দেখা পেয়েছে। আর সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ারে ১৫তম টি২০ খেলতে নেমে ৫৫ বলে ৭১ করে আউট হলেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত।

টস জিতে ব্যাটি করতে নামা আরেক ওপেনার সৌম্য আর মিডল অর্ডারে লিটন কিছুই করতে পারলেন না। সাকিব এলেন সেট হলেন ২০ বলে করলেন ২৩ রান। বিগ হিট করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন। মুলত শান্তর মারকুটে ব্যাটিং আর শেষ দিকে আফিফের ১৯ বলে ১ বাউন্ডারি আর ছয়ে ২৯ রানে বাংলাদেশ ১৫০ রানে পা
দেয়।

১৫১ রানের মিশনে নেমে জিম্বাবুয়ে পেসার তাসকিনের তোপের মুখে পড়ে। নেদার‌ল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ রানের জয়েও তাসকিনের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ৪, ১৭, ৩৫, ৩৫ আর ৬৯ রানে মাথায় জিম্বাবুয়ের ৫ম উইকেটের পতন ঘটে। এর মধ্যে আশা করার মতো ঘটনা ছিল সিকান্দর রাজাকে শূণ্য রানে আউট করা।
এর মধ্যে তাসকিনের ৩ ওভারে ১ মেডেন দিয়ে ৯ রানে ৩ উইকেট পকেটে জমা হয়ে গেছে।

কিন্তু জিম্বাবুয়ের আরেক কান্ডারি সেন উইলিয়ামস ক্রিজে ছিলেন। ১৫ ওভারে শেষে স্কোর ৯৫/৫ আর উইলিয়ামসের নিজের নামের পাশে ছিল ২৮ বলে ৩৮ রান। জয় পেতে দরকার ছিল ৩০ বলে ৫৭ রান। ১৫.৪ ওভারে আসে শত রান, শেষ ২৬ বলে ৫১ রান দরকার। ১৬ ওভারে ১০৫/৫, ২৩ বলে যখন ৪৫ রান প্রয়োজন তখন
আক্রমণে এলেন মুস্তাফিজ। এই ওভারটা খুবই গুরুত্ব ছিল হার-জিতের হিসেবে। কত রান দেন মুস্তাফিজ? সেটাই ছিল বড় ফ্যাক্টর। ভরসা করার মতোই বোলিং করলেন কাটার মাষ্টার, দিলেন মাত্র ৬ রান।
শেষ দিকে ১৮ বলে ৪০ রান জিম্বাবুয়ের জন্য আরো কঠিন হয়ে গেল। কিন্তু ১৮তম ওভারে পেসার মাহমুদুল হাসান ১৪ রান দিয়ে চাপে ফেলে দিলেন বাংলাদেশকে। ১২ বলে ২৬ রান প্রয়োজন জিম্বাবুয়ের। ১৯তম ওভারটা বল হাতে আক্রমনে এলেন অধিনায়ক সাকিব নিজেই। জিম্বাবুয়ের স্কোর ১২৬/৫, সাকিব ৬ বলের ১মটিতে এক রান, দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি আর তৃতীয় বলে নিজেই বল আটকে সরাসরি থ্রোতে ফিফটি করা দুর্দান্ত ব্যাটর উইলিয়ামসকে (৪২ বলে ৬৪ রান) রান আউট করলেন। সাকিব ৬ বলে দিলেন ৯ রান, শেষ ওভারে ৬ বলে ১৬ রানের হিসেব। আক্রমণে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২ বলে ১ রান ১ উইকেট শিকার করলে ৪ বলে ১৫ রানের হিসেব আরো কঠিন। কিন্তু ৩য় বলে বাউন্ডারি হয়ে গেলে ৩ বলে ১১ রানের হিসেবে ৪র্থ বলে ছক্কা, ২ বলে এবার প্রয়োজন ৫ রান! ৫ম বলে স্টাম্পিং, ৬ষ্ঠ বলে এবার জিম্বাবুয়ের দরকার সরাসরি
ছক্কার মার। ১ বলে ৫ তো হবে না, রান তো দূরের কথা ব্যাটার বল চোঁখেই দেখেনি। সৈকতের ডেলিভারিতে ভেলকি দেখে স্ট্যাম্পিং হলেন। স্কোর ১৪৬/৯।

শেষ বলে স্ট্যাম্পিং হলেও নো বলের ঘোষণায় টাইগারা হতম্ভব হয়ে পড়ে। ফ্রি হিটের ঘোষণাও হারের আতংক পেয়ে বসে। কিন্তু শেষ বলে নো আর ফ্রি হিটও ব্যাটে লঅগাতে দিলেন না স্পিনার সৈকত।