বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উপক’লীয় জেলা বাগেরহটে। সকাল থেকেই জেলা শহর থেকে শুরু করে সব উপজেলায় গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বৃষ্টি ও বাতাসের গতি বাড়বে এবং নিম্নচাপটি রবিবার (২৩ অক্টোবর) মধ্যরাতেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নেবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়েছে। এটি এখন গভীর নিম্নচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। নিম্নচাপটি মোংলা সমদ্র বন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে। যার ফলে মোংলা সমদ্রবন্দকে তিন নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে মোংলা বন্দরের পণ্য খালাস ও বোঝাই স্বাভাবিক রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকে মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া, রামপালসহ সব উপজেলায়ই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভাড়ি বৃষ্টির খবরও পাওয়া গেছে। বৃষ্টির কারণে মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় ফেরি-খেয়াঘাট পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এখন পর্যন্ত বন্দরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ।
তিনি বলেন, আবহওয়া অধিদপ্তরের সিগনাল বৃদ্ধি ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোববার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্দরে ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ ছিল। সবগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক শিহাব কবির বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে সকাল থেকে সূর্য উঠে নেই। সকাল থেকে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। ২৪ ও ২৫ অক্টোবর সকাল থেকে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপের ফলে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় বাগেরহাটে প্রস্তুতি গ্রহন
দেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সুন্দরবন বিভাগ ও কোস্টগার্ড ব্যবপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। মোংলা সমুদ্র বন্দরে জারি করা হয়েছে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত। বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। এদিকে বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাগেরহাটে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৪০টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ স্বেচ্ছাসেক ও মেডিকেল টিম। রবিবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে ধেয়ে আসা ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় মোকাবেলায় দূর্যোগ প্রস্তুতি সভা করেছে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন।
দূর্যেগ প্রস্তুতি সভায় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঘড়ে রূপ নিতে যাওয়া সিত্রাং মোংলা বন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র। দূর্যোগের সময়ে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৩০ জন অশ্রয় নিতে পারবে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ২শত ৯৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় মোকাবেলায় মোংলা বন্দর প্রস্তুত রয়েছে। এই মূহুর্তে সার, কয়লা, গ্যাস ও সিমেন্টর কাঁচামাল ক্লিংকারসহ বন্দরে ১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। সেসব জাহাজে স্বাভাবিক নিয়মেই কাজ চলছে। সংকেত বাড়লে পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন জানিয়েছে, সাম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতামূলক প্রস্তুতি হিসেবে সকল ফিশিং ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেয়ার পাশাপশি কোস্টগার্ডের জাহাজসমুহকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে মোংলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, সাম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোর থেকে বাগেরহাটসহ উপকূল জুড়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আগামীকাল ও পরশু মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এছাড়া নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাগেরহাট থেকে রুহুল আমিন বাবু