ফারুক বিন আবদুল্লাহ। ফিশিং জাহাজ ‘এমভি মাগফিরাত’র ক্যাপ্টেন হিসাবে বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চলতি মাসেই সপরিবারে আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল তার। আমেরিকা যাওয়ার ভিসা ও বিমানের টিকিটও রেডি করা ছিল। কিন্তু তিনি চলে গেছেন ঠিকই। তবে আমেরিকা নয়, না ফেরার দেশে। তাকে হারিয়ে পুরো পরিবার এখন শোকে মুহ্যমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাপ্টেন ফারুক বিন আবদুল্লাহসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ। বিকালে উদ্ধার হয় আরেকজনের লাশ। এ ঘটনা তদন্তে জাহাজের নিবন্ধনকারী সংস্থা নৌ-বাণিজ্য অফিস তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে মেরামতের জন্য সি রিসোর্স কোম্পানির ডকইয়ার্ডে তোলার সময় ফিশিং জাহাজ ‘এমভি মাগফিরাত’ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বয়ার সঙ্গে ধাক্কা খায়। এ সময় পানি ঢুকে অল্প সময়ের মধ্যে জাহাজটি কর্ণফুলী নদীতে তলিয়ে যায়। ঘটনার পর জাহাজে থাকা প্রধান প্রকৌশলীসহ ৯ নাবিককে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ক্যাপ্টেনসহ ৭ জন নিখোঁজ হন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্ণফুলী নদীতে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাহাজের ক্যাপ্টেন ফারুক বিন আবদুল্লাহর লাশ নৌবাহিনীর ৬ নম্বর ঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়। নাবিক রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয় ১২ নম্বর ঘাট থেকে। অপর দুজনের লাশ ১৫ নম্বর ঘাট থেকে উদ্ধার হয়। এছাড়া বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কর্ণফুলী থানার ডাঙ্গার চর এলাকা থেকে জহির উদ্দিন নামের আরেকজনের লাশ উদ্ধার হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়, ক্যাপ্টেন ফারুকসহ আরও কয়েকজনের লাশ আনা হয়েছে। সেখানে তাদের স্বজনরা আহাজারি করছেন।
ফারুকের স্বজনরা জানান, মেরিন ফিশারিজ থেকে পাশ করা ক্যাপ্টেন ফারুক বিন আবদুল্লাহ ছিলেন মেধাবী ছাত্র। মাইশা নামে তার এক মেয়ে রয়েছে। তিনি নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন।
এদিকে স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন ফারুকের স্ত্রী আরেফিন জাহান। ক্যাপ্টেন ফারুক বিন আবদুল্লাহর ছোট ভাই নাঈম আমেরিকা প্রবাসী। বড় ভাইয়ের পুরো পরিবারকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিসা ও টিকিটসহ সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছিল। চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে ক্যাপ্টেন ফারুকের পরিবার নিয়ে আমেরিকা চলে যাওয়ার কথা ছিল। ফারুতের পৈতৃক বাড়ি নগরীর লালখান বাজার এলাকায়।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, পাঁচজনের লাশ চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।