বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোন নির্বাচন বাংলার মাটিতে হতে দেয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন যদি হতে হয়, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
তিনি আওয়ামী লীগ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখছে এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগ কোনদিনও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগ ২০টির অধিক সিট পাবে না। এ কারণেই তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এত ভয়। আওয়ামীলীগ পর পর তিন বার জনগণের ভোট লুট করে, দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় এসেছে। ইনশায়াল্লাহ জনগণের দাবী ও আন্দোলনের মুখে সংসদ ভেঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হতে হবে এছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তাই অবিলম্বে জনগণের দাবী মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করে জনগণের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দূর্গা পূজা নিয়ে সরকারি মহলের প্রচারণা প্রসঙ্গে বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ পূজায় বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে নানা কথা রটাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে গত এক বছরে পূজা মন্ডপে ৯০ টির মত ঘটনা ঘটেছে। পরে দেখা গেছে আওয়ামীলীগের লোকজন সেসব ঘটনা ঘটিয়েছে। একারণে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইয়েরা এখন বলতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের অধীনে তারাও নিরাপদ নয়। তিনি সরকারের গণতন্ত্রহীনতার সমালোচনা করে বলেন, একসময় ছিল এক নেতা এক দেশ। এখন তেমনটাই চলছে, এখানে এক নেতা ছাড়া আওয়ামী লীগে আর কোন নেতার কোন মূল্যায়ন নাই।
শুক্রবার বিকেলে তিনি বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আ স ম হান্নান শাহ’র ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া চালা ওয়েলফেয়ার ক্লাব মাঠে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান আলোচক বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন, বিশেষ আলোচক বিএনপি’র সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু, াজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হান্নান শাহ্ পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি সোহরাব উদ্দিন প্রমূখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরো বলেন, যে মামলায় দেশ নেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে, সেই মামলায় অন্যরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। যারা ক্যাসিনো ঘটনায় জড়িত, যারা অর্থ আত্মসাৎকারী ও অর্থ পাচারকারী, যারা ব্যাংক ডাকাতি ও মানুষ খুন করছে তাদেরকেও জামিন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে না। তারা জানে, যদি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয় বা জামিন পান, তাহলে তিনি হ্যামিলনের বংশীবাদক হয়ে উঠবেন। যার বাঁশির সুরে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় বের হয়ে আসবে এবং এ সরকারের পতন ঘটাবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, দশ টাকা কেজি চাল, বিনা পয়সায় সার, ঘরে ঘরে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সাথে তামাশা করছেন। বর্তমানে ঘরে ঘরে এখন লক্ষ লক্ষ যুবক বেকার। শিক্ষকতার চাকুরী পেতে বিশ লাখ, কনষ্টেবল পদে ২৫ লাখ, চৌকিদার-দফাদার পদে বারো লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। একরাতে পেট্রোল, ডিজেল, কোরোসিনের দাম বেড়েছে ৫৪ ভাগ। তা ছাড়া চাল, ডাল, সবজির দাম আকাশ চুম্বি। সবকিছুর দাম এখন হাতের নাগালের বাইরে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ,স.ম. হান্নান শাহ’র কবরে ফাতেহা পাঠ এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।