সুজা তালুকদার চট্টগ্রাম থেকে

ঝোপঝাড় ও জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখা মিললো মাজার ও গাঁজার গাছের। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির (আরটিএ) এলাকায়। একাডেমির ভেতর ১০টি পুকুরও পাওয়া গেছে, যেগুলো ইজারা না নিয়েই মাছ চাষ করছেন কয়েকজন কথিত যুবলীগ নেতা।

একাডেমির ভেতর ঝোপঝাড়ের আড়ালে এখানে প্রায় বসতো মাদকের আসরও। পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখা মিলেছে একটি মাজারের। চট্টগ্রাম রেলের ৬৮ একরের জমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমির বেশিরভাগ জায়গায় ঝোপঝাড়, জঙ্গল, আকাশমনি গাছ থাকায় তা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সেখানে গাঁজার গাছও পাওয়া গেছে। জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলেছে পদ্ম গোখরা সাপের।

১০টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, লিজ না নিয়েই যেগুলোতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এসব পুকুরে কথিত যুবলীগ নেতা হাসান ও হায়দারসহ আরও কয়েকজন মাছচাষ করছেন। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) ট্রেনিং একাডেমিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একাডেমির ভেতরে জঙ্গল পরিষ্কার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আকাশমনি গাছের ডালপালাও কাটা হচ্ছে। এরমধ্যে পাওয়া গেছে ‘সৈয়দ জিন্নত আলী শাহ’র মাজারের অস্তিত্ব! এ সময় মাজার জিয়ারতে আসা নবী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘জঙ্গলের ভেতরে এ মাজার হয়েছে প্রায় ৯-১০ বছর হলো। তবে কিভাবে এ মাজার সৃষ্টি হয়েছে তা জানি না।’ দেখা পাওয়া গেল মাজারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক সময়কার ঝালমুড়ি বিক্রেতা নাসির উদ্দীনের (৩৫)। এখন ঝালমুড়ি বিক্রি বাদ দিয়ে মাজারে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমির বিশাল জায়গায় কথিত যুবলীগ নামধারী হাসান চারটি, হায়দার তিনটি, সুমন ওরফে বেজি সুমন দুটি ও হাসেম একটি পুকুরে মাছচাষ করে আসছেন। একাডেমির সিনিয়র ট্রেনিং ইনস্ট্রাক্টর নওশের আলী বলেন, ’২৫ একরের একটি জলাশয়ের লিজ দেওয়া আছে। তবে এ ১০টি পুকুরের কোনো লিজ দেওয়া হয়নি।’

এদিকে পুকুর ‘দখল করে’ মাছচাষের বিষয়টি স্বীকার করেন কথিত যুবলীগ নেতা হাসান ও হায়দার। দুজনের দখলে আছে সাতটি পুকুর। এ বিষয়ে তারা বলেন, ‘খালি পড়ে থাকা পুকুর সংস্কার করে তাতে মাছচাষ করছি। তবে কোনো লিজ নেই আমাদের। বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে লিজের আবেদন করেও পাইনি আমরা।’

আরটিএ’র সিনিয়র প্রশিক্ষক রফিক উল্লাহ বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি চার মাস হলো। এরপর এখানকার ঝোপঝাড় ও জঙ্গল পরিষ্কার, আকাশমনি গাছের ডালপালা কাটার উদ্যোগ নিই। অস্থায়ী সাতজন শ্রমিক দিয়ে এসব পরিষ্কার করাতে গিয়ে দেখি অনেকগুলো গাঁজার গাছ। গাঁজা সেবনকারীদের ফেলা বীজ থেকে এ গাছ জন্মেছে হয়তো। এছাড়া এখানে অনেক পদ্ম গোখরা সাপও দেখা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার সময় এখানে একটি মাজার দেখা গেছে। কে বা কারা এ মাজার এখানে গড়ে তুলেছে জানি না। এখানে আবার অনেক মুরিদও তৈরি হয়েছে। তাহলে এত বছর একাডেমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনকারীদের কাজ কি ছিল?’

সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার আতাউর রহমান বলেন, ‘একাডেমিতে গাছের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ আকাশমনি। একটি আকাশমনি গাছ মাটি থেকে দৈনিক ১৮০ লিটার পানি শোষণ করে। এ গাছ সরকারিভাবে বনায়ন নিষিদ্ধ শর্তেও কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ গাছ কাটতে হলে পরিবেশ ও ফরেস্টের অনুমতি লাগে। এগুলো অচিরেই কাটা না হলে আশপাশ পানিশূন্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’

চট্টগ্রামের রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে সদ্য যোগ দেওয়া চিফ ইন্সপেক্টর এয়াছিন বলেন, ‘আমি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। এমন অনিয়ম থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’ তবে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির ভারপ্রাপ্ত রেক্টর আতাউল হক ভূঁইয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।