গাজীপুরে গচ্ছিত রাখা টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত না দেওয়ায় শ্বশুরকে হাত-পা বেঁধে ও মুখে গামছা গুঁজে স্কচ টেপ লাগিয়ে শ্বাসরোধে খুন করেছে তার জামাতা। রবিবার নিহতের অর্ধগলিত লাশ একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের জামাতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহতের নাম ময়নাল হোসেন (৭৫)। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন টান কালিয়াকৈর এলাকার ইব্রাহিমের ছেলে।
গ্রেফতারকৃত জামাতা শহিদুল ইসলাম (৩৬) টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাতরিয়া গ্রামের আরজ আলীর ছেলে। অপর গ্রেফতারকৃত আলী আকবর হিরা (৩০) গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন পূর্ব চান্দরা গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ৭ বছর পর সৌদী আরব থেকে দেশে ফিরেন শহিদুল ইসলাম। দেশে ফেরার পর শহিদুল ইসলাম প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও গত ২৫ এপ্রিল কালিয়াকৈরের ময়নাল হোসেনের মেয়ে শিল্পী আক্তারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ বিয়ের পর শ্বশুর ময়নাল হোসেনের কাছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণালংকার গচ্ছিত রাখেন শহিদুল। গত ১ সেপ্টেম্বর গচ্ছিত রাখা ওই টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চান শহিদুল। কিন্তু ময়নাল সেগুলো ফেরত না দিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে গচ্ছিত রাখা ওই টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত দিতে অস্বীকার করে শহিদুলকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তার দ্বিতীয় শ্বশুর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ময়নাল হোসেনকে খুন করার পরিকল্পনা করে জামাতা শহিদুল।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান জানান, গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে শ্বশুর ময়নাল হোসেনকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় শহিদুল ইসলাম। ওইদিন সন্ধ্যা হয়ে গেলেও শ্বশুর ও জামাতা বাড়িতে ফিরে না আসায় স্বজনেরা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। তাদের সন্ধান না পেয়ে পরদিন নিহতের মেয়ে শিল্পী আক্তার (শহীদুলের স্ত্রী) বাদী হয়ে নিখোঁজের ঘটনা উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্বশুর ও জামাতার অবস্থান নিশ্চিত হয়। পরে শনিবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন ভাধাইল এলাকায় প্রথম স্ত্রীর ভাইয়ের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে শহীদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কালিয়াকৈরের পূর্ব চান্দরা গ্রাম থেকে তার সহযোগী আলী আকবর হিরাকে গ্রেফতার করে। তাদের স্বীকারেক্তির ভিত্তিতে ঘটনার ৪দিন পর রবিবার ভোরে পুলিশ গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার ভবানিপুর এলাকায় বনের ভিতর থেকে ময়নাল হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য লাশটি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা খুন করার কথা স্বীকার করে। ঘটনার দিনে তারা কৌশলে ময়নাল হোসেনকে আশুলিয়ার ভাধাইল এলাকায় শহীদুল ইসলামের প্রথম স্ত্রীর ছোট ভাইয়ের ভাড়া বাসার একটি কক্ষে নিয়ে আটক করে। সেখানে তারা ময়নাল হোসেনের হাত-পা বেঁধে ফেলে। সে ডাক চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন টের পেয়ে যেতে পারে এ আশংকায় তারা ময়নালের মুখে গামছা গুঁজে স্কচটেপ মুড়িয়ে তাকে কক্ষে রেখে শহিদুল ও হিরা ঘরের বাহিরে যায়। বেশ কিছু সময় পর তারা বাহির থেকে ফিরে এসে ময়নাল হোসেনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তারা দু’জন নিহতের লাশ কাঁধে করে পার্শ্ববর্তী ভবানিপুর এলাকায় বনের ভিতর ফেলে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে।