গাজীপুরে বন্দুক যুদ্ধের পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে গুলিবিদ্ধ একজনসহ আন্তঃজেলা দুধর্ষ ডাকাত দলের ৯ ডাকাত। ঘটনার সময় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের মধ্যে দুই সহোদর ভাইও রয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে গুলি ও ম্যাগজিনসহ বিদেশী পিস্তল, তাজা ককটেল, চাপাতি, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও ইজিবাইক। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় দেড় ডজনেরও বেশী মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে জিএমপি’র সদর দপ্তরে পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- নীলফামারী সদর থানা এলাকার বাজার (বন বিভাগ) গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে মিতা আনোয়ার (৩৫), মাদারীপুর সদর থানা এলাকার ডর গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে রুবেল (৪০), ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানার পূর্ব রসুলপুর গ্রামের আবেদ আলী বেপারীর ছেলে বাবুল বেপারী ওরফে বাবু (৩৬), শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিললৈয়ানা গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে জাকির হোসেন ফরাজী (৪০), একই থানার কাজিকান্দি গ্রামের নুরুল আকন ওরফে নুরুর ছেলে সোলাইমান আকন (৪০), গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পশ্চিম নারিকেলবাড়ী গ্রামের শ্যামইল বাড়ইয়ের ছেলে সাগর বাড়ই (৪১) ও মৃদুল বাড়ই (৪৫)।

জিএমপি’র কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গত ১৬ আগস্ট দুপুরে মহানগরের কাশিমপুর থানার এনায়েতপুর (আনার আলী জুট কারখানার) সামনে ৬/৭ জন ডাকাত মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সায় এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় তারা ডাচ্ বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং রকেটের ডিএসএম শাহেদ শরীফকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা লুটে নেয়। এঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডাকাত দলের সদস্য ইউসুফ আলী রানা (৩৫) এবং বিধান হালদারকে (৩১) সোমবার কাশিমপুরের তেতুঁইবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় তাদের অপর সহযোগীরা ডাকাতি সংঘটনের জন্য ওইদিন রাত ৩টায় কাশিমপুর থানার লোহাকৈর এলাকার খান ব্রাদার্স খেলার মাঠে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মিলিত হচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে উপ-পুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মো. শামছুর রহমান (অপরাধ উত্তর) এ তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ এর নেতৃত্বে পুলিশের ৪টি টিম রাত ১২ টার দিকে গোপনে ওই খেলার মাঠের আশেপাশের দোকানে অবস্থান নেয়।

তিনি জানান, আনুমানিক রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কয়েকজন ডাকাত মাঠে প্রবেশের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষনিক চারদিক থেকে ডাকাতদের ঘিরে ফেলে। এসময় ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিষ্ফোরণ ও গুলি বর্ষণ শুরু করে। তারা বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। এতে পুলিশের কনস্টেবল মো. মোস্তাফিজুর রহমান আহত হন। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। পরে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ সোলাইমান আকন (৪০)সহ ডাকাতদলের আরো ৭সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ম্যাগজিন ও এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল, ১২ টি তাজা ককটেল, ৩টি চাপাতি, ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোটরসাইকেল, দুইটি হেলমেট, একটি অটোরিকশা ও ব্যাটারী চালিত একটি ইজিবাইকসহ গুলি ও কার্তুজের খোসা জব্দ ও উদ্ধার করা হয়।

আহত পুলিশ সদস্যকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কাশিমপুর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণ, কর্তব্যরত পুলিশের উপর আক্রমণ, অবৈধ আগ্নেযাস্ত্রের ব্যবহার, বিস্ফোরক মজুদ ও বিস্ফোরণ ঘটানোর অপরাধে চারটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতদের নামে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রংপুর জেলা এবং ঢাকার বিভিন্ন থানায় ডাকাতি ও দস্যুতার অভিযোগে দেড় ডজনেরও বেশী মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) জিয়াউল হক, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) দেলোয়ার হোসেন, উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু তোরাব শামসুর রহমান, উপ-কমিশনার (সদর) ইলতুৎমিশ, উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ইব্রাহিম খান, উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।