পুরো বাংলাদেশের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে বা অন্দর মহলের দূর্নীতি নিয়ে বহুবার বহু তথ্য প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু তারপরও চলছে পাসপোর্ট নিয়ে বানিজ্য। প্রমান হিসাবে বলা যেতে পারে, শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি এয়ারপোর্টে আটকের ঘটনা। তারপরও চলছে পাসপোর্ট বাণিজ্য।
এবারের স্পট রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস। রাজশাহী-বাসি আনসার ও দালালদের দৌরাত্ম্যে অসহায় পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ। বহু দিন ধরেই এ অভিযোগ রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে। আজ একটি টিভি চ্যানেল এ তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে।
টিভি চ্যানেলের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা না দিলে ঘোরানো হচ্ছে মাসের পর মাস। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করেন।
রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এসব অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে পাসপোর্ট অফিসে পরিচয় গোপন করে আনসার সদস্য রাজুর সঙ্গে কথা হয় ঐ টিভি চ্যানেলের সংবাদ কর্মীর। ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সংবাদ কর্মীকে। তবে ঐ টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা দেখে তড়িঘড়ি করে একটি রুমের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন ওই আনসার সদস্য। ক্যামেরায় আনসার সদস্য রাজুর বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলে তিনি পালিয়ে যান। এ দৃশ্যটি রেকর্ড হয়ে যায় ক্যামেরায়। ভিডিওতে দেখা যায়, আনসার সদস্য রাজু সময়ের ক্যামেরা দেখে তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ সময় তিনি ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার কথা অস্বীকার করতে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কেন আপনার কাছে আট হাজার টাকার কথা বলব? আমি কেন কথা বলব আপনার সঙ্গে?’ তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যরা আবেদন ফর্মে কোনো না কোনো ভুলত্রুটি ধরে দিনের পর দিন মানুষকে হয়রানি করছেন।
এছাড়া দালালের দৌরাত্ম্য, সার্ভার সমস্যাসহ নানা জটিলতার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে দালাল বা আনসার সদস্যদের হাতে দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা। একই অবস্থা পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রেও বলছেন ভুক্তভোগীরা।
রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক মো. কালাম হোসেন খন্দকার বলেন, স্টাফ বা কেউ কোনো টাকা পয়সা নিয়েছে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমি পাইনি। তবে বাইরের অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে চেষ্টা করছি বাইরে যেন এমনটা না হয়।
সাধারণ পাসপোর্ট ২১ দিনের মধ্যে পাওয়ার কথা। সরকারি ফি ৫ হাজার ৪০০ টাকা। জরুরি পাসপোর্ট ৭ দিনের মধ্যে পাওয়ার কথা। সরকারি ফি ৬ হাজার ৩৫০ টাকা। সাধারণ পাসপোর্ট ১০ বছরমেয়াদি ৬২ পৃষ্ঠার সরকারি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা। এছাড়া পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন করতে ফি লাগে ৫ হাজার ৪০০ টাকা।
প্রতি মাসে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রায় সাত হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। মাঝেমধ্যে পাসপোর্ট অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ধরাও পড়েন দালালচক্রের সদস্যরা। এরপরও কেন কমছে না তাদের দৌরাত্ম্য এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।