বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কনমেবল অঞ্চলে সপ্তম হওয়ায় বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি আলেক্সিস সানচেজ-আরতুরো ভিদালের চিলি। এরপর গত মে মাসে বোমা ফাটায় তারা। অভিযোগ করে কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ইকুয়েডর দলে খেলা বায়রন ডেভিড কাস্তিয়োর জন্ম আদতে কলম্বিয়ায়। ইকুয়েডরের খেলোয়াড় বায়রন কাস্তিয়োর নাগরিকত্ব নিয়ে ফের সংশয় দেখা দিয়েছে। গত মে মাসে কাস্তিয়োর নাগরিকত্বের প্রশ্ন তুলে তাকে ইকুয়েডরের হয়ে খেলার অযোগ্য দাবি করেছিল বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া চিলি।

তবে গত জুনে কাস্তিয়োকে ইকুয়েডরের নাগরিক তথা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফিফা। যার ফলে চিলির আবেদন নাকচ হয়ে যায় ও ইকুয়েডরের বিশ্বকাপ খেলতে আর কোনো বাধা থাকে না। এবার নতুন তদন্তে চিলির অভিযোগের পক্ষে বেরিয়ে এসেছে শক্ত প্রমাণ, যার ফলে বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ হতে পারে ইকুয়েডর। নতুন করে বোমা ফাটিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। তাদের দাবি, ইকুয়েডর ফুটবল ফেডারেশন সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে অবৈধভাবে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলিয়েছে কাস্তিয়োকে।

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে সেরা চারে থেকে কাতার বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করেছে ইকুয়েডর। বাছাইপর্বে মোট আট ম্যাচ খেলেছেন কাস্তিয়ো, কিন্তু চিলির দাবি, ইকুয়েডর সনদ জালিয়াতি করে কলম্বিয়ার নাগরিক কাস্তিয়োকে এই ম্যাচগুলো খেলিয়েছে।

চিলির এই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বাছাইপর্ব সাত নম্বরে থেকে শেষ করা চিলিই পেত বিশ্বকাপের টিকেট। কারণ অভিযোগ প্রমাণ হলে কাস্তিয়োর খেলা সেই ৮ ম্যাচের সম্পূর্ণ পয়েন্ট পেত বিপক্ষ দল। সে ক্ষেত্রে পয়েন্ট তালিকার সেরা চারে ঢুকে যেত চিলি। কিন্তু জুন মাসে চিলির অভিযোগ নাকচ করে রায় দেয় ফিফা।

সেই তদন্ত চলাকালে বায়রন কাস্তিয়ার দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের অডিও হাতে পেয়েছে ডেইলি মেইল। সেখানে স্পষ্টতই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে কাস্তিয়ো জানিয়েছেন, কীভাবে কলম্বিয়ার নাগরিক হয়েও ইকুয়েডরের হয়ে খেলেছেন ও এ জন্য তাকে কী কী করতে হয়েছে তার সবই বলেছেন তিনি।

কাস্তিলো যা বলেন তার চুম্বুক অংশগুলোও প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেখানে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিম্নরূপ-

* কাস্তিয়ো জানিয়েছেন, তার জন্মসাল ১৯৯৫; কিন্তু ইকুয়েডরিয়ান জন্মসনদে তার জন্ম ১৯৯৮ সালে।

* কাস্তিয়োর কলম্বিয়ান জন্মসনদে নাম—বায়রন হাভিয়ের কাস্তিয়ো সেগুরা। ইকুয়েডরিয়ান জন্মসনদে অবশ্য অন্য নাম—বায়রন ডেভিড কাস্তিয়ো সেগুরা।

*  ফুটবল ক্যারিয়ার গড়তে কলম্বিয়ার টুমাকো ছেড়ে ইকুয়েডরের সান লরেঞ্জোয় যাওয়ার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে অনেক কথা বলেছেন কাস্তিয়ো।

* ইকুয়েডরে যে ব্যবসায়ী তাকে নতুন নাম দিয়েছিলেন, তাকে চেনার কথা সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন কাস্তিয়ো।

কাস্তিয়োর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য আগেও উঠেছিল। ২০১৫ সালে প্রথম এমন অভিযোগ ওঠে তার বিষয়ে। সেবার প্রথম ইকুয়েডরের ঘরোয়া ফুটবলে খেলেন কাস্তিয়ো। সে সময় জাল জন্মসনদ ব্যবহার করে কাস্তিয়োকে মাঠে নামানোয় নিষিদ্ধ করা হয় তার ক্লাব নর্তামেরিকাকে।

সেবার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সবকিছু স্বীকার করেছিলেন কাস্তিয়ো। সেই অডিও ক্লিপস ফিফার কাছে হস্তান্তর করবে মেই। এটা দেখে ফিফা নিজের সিদ্ধান্ত জানাবে বৃহস্পতিবার। সবকিছু বিবেচনা করে ফিফা যদি জুনে দেওয়া সিদ্ধান্ত বদলায়, তবে বিষয়টি তাদের জন্য বিব্রতকর হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একই কাণ্ডের জন্ম দেয় বলিভিয়া। তারা খেলিয়েছিল প্যারাগুয়ের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা ডিফেন্ডার নেলসনকে। ফিফার নিয়মানুযায়ী, কোন দেশের হয়ে খেলার জন্য সে দেশে আগে পাঁচ বছর বাস করতে হবে। কিন্তু চার বছরের মাঠে নেমে যাওয়ায় সে বাছাইপর্ব থেকে বলিভিয়াকে সরিয়ে নিয়েছিল ফিফা।