নতুন গান “হেই সামালো” প্রকাশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো কোক স্টুডিও বাংলা-র প্রথম সিজন। কোকা-কোলার আন্তর্জাতিক সঙ্গীত আয়োজন কোক স্টুডিও-র বাংলাদেশি সংস্করণ প্রথম সিজনে থিম সং “একলা চলো রে”-এর পাশাপাশি মোট ১০টি গান প্রকাশ করেছে। প্রথম সিজনের শেষ গানটি ৫০০ ভক্তের জন্য বিশেষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ।
কোক স্টুডিও বাংলা, দেশের অন্যতম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি নতুন ও পুরাতন প্রতিভার সাথে নিয়ে চমৎকার সব গান তৈরি ও বাংলাপ্রেমী দর্শকদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। ফেব্রুয়ারির মাঝে যাত্রা শুরু করে কোক স্টুডিও বাংলা-র প্রথম সিজন। ছয় মাস ব্যাপী দর্শক-শ্রোতাদের দারুণ সব গান উপহার দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের সিজন। যাত্রা শুরু করার পর থেকে এই স্বল্প সময়ে কোক স্টুডিও বাংলা-র ইউটিউব সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লক্ষ। আর এর ফেসবুক পেইজে ফলোয়ারের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। গানগুলোর মোট ভিউ সংখ্যা ৭ কোটি। ১.৫ কোটি ভিউ নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষস্থানে আছে “ভবের পাগল” এবং “নাসেক নাসেক।”
প্রথম সিজনের শেষ গান “হেই সামালো”-তে অংশ নিয়েছেন এক ঝাঁক প্রবীণ এবং নবীন তারকা: সামিনা চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, শায়ান চৌধুরী অর্ণব, দিলশাদ নাহার কণা, ঋতুরাজ এবং সুনিধি নায়েক। এছাড়াও আছেন অনিমেস রায়, রুবাইয়াত, মাশাসহ আরও অনেকে। গানটিতে আরো দেখা যাবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাসকারী ম্রো জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের। বান্দরবানের পাহাড়ে তাদের যে বাঁশির সুর শুনতে পাওয়া যায়, তা এখন শোনা যাবে কোক স্টুডিও বাংলা-র বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মেও।
“হেই সামালো” শ্রদ্ধা জানাতে চায় বাংলাদেশিদের অদম্য চেতনা ও বিদ্রোহী চরিত্রের প্রতি। সলিল চৌধুরীর লেখা “হেই সামালো” ও আবদুল লতিফের লেখা “ওরা আমার মুখের ভাষা” গান দু’টির মধ্যে ফিউশনের মাধ্যমে এই গানটি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালের কৃষকদের নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রতিবাদ পরবর্তীতে বিদ্রোহে রূপ নেয়, সেই সময় “হেই সামালো” গানটি রচিত হয়। আর “ওরা আমার মুখের ভাষা” গানটির প্রেক্ষাপট হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, যার পেছনে বিশ্বাস ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের একটি প্রধান অধিকার।
কোক স্টুডিও বাংলা-র সঙ্গীত প্রযোজক শায়ান চৌধুরী অর্ণব বলেন, “শেষ গানটির জন্য আলাদা কিছু করার চিন্তা থেকেই বিভিন্ন ঘরানার শিল্পীদের একত্রিত করে, গণসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছি আমরা। সবাই মিলে গানটি করা ছিল এক দারুণ অভিজ্ঞতা। এই গান বাংলাদেশিদের অদম্য চেতনা তুলে ধরেছে। আশা করি, গানটি গাওয়ার সময় যে আবেগ আমরা অনুভব করেছি, তা আমাদের দর্শক-শ্রোতাদেরও স্পর্শ করবে।”
৫০০ ভক্তের জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে কোকা-কোলা বাংলাদেশ। এই ভক্তরা শুরু থেকে কোক স্টুডিও বাংলাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। আয়োজনে অংশ নেওয়া ভক্তদের অনেকে গত ছয় মাস ধরে প্রথম সিজনের গানগুলো নেচে বা গেয়ে কভার করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম সিজনের শিল্পীদের স্কেচ এবং পেইন্টিং শেয়ার করে তাদের প্রতি সম্মান জানানো চিত্রশিল্পীরাও এই আয়োজনে অংশ নেন। শুরু থেকেই যারা এই প্ল্যাটফর্মকে সমর্থন জানিয়ে আসছেন, সেই কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য এই আয়োজন করা হয়।
কোকা-কোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং বলেন, “সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোক স্টুডিও বাংলা নিয়ে আসতে পারাটা আমাদের জন্য দারুণ আনন্দের ব্যাপার। প্রথম সিজনে আমরা সবার আন্তরিক সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশে রিয়েল ম্যাজিক সৃষ্টি করা, এবং এক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি বলে আমি বিশ্বাস করি। এর কৃতিত্ব কোক স্টুডিও বাংলা-র নেপথ্যের কারিগরদের, সকল শিল্পী ও পারফরমারদের। তারা রিয়েল ম্যাজিকে বিশ্বাস করেছেন এবং তা সৃষ্টি করেছেন। শুরুর দিনটি থেকে আমাদের সমর্থন জানানো ভক্তদের ধন্যবাদ জানানোর জন্য আজকের এই আয়োজন। তাদের অব্যাহত সমর্থন এবং আমাদের আরও ভালো কিছু করতে উৎসাহিত করার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
প্রথম গান “নাসেক নাসেক” দিয়ে শুরু করে প্রথম সিজনে বিভিন্ন ধারার চমৎকার সব গান প্রকাশ পেয়েছে। যার মধ্যে আছে “প্রার্থনা,” “বুলবুলি,” “ভবের পাগল,” “চিলতে রোদ,” “ভিন্নতার উৎসব,” “সব লোকে কয়,” “লীলাবালি,” “দখিন হাওয়া,” এবং সর্বশেষ “হেই সামালো।” প্রথম সিজনে অংশ নিয়েছেন মমতাজ বেগম, বাপ্পা মজুমদার, পান্থ কানাই, দিলশাদ নাহার কণা, সামিনা চৌধুরী, মিজান, তাহসান খানসহ বাংলাদেশের এক ঝাঁক কিংবদন্তী তারকা শিল্পী। আরও ছিলেন অনিমেস রায়, বগা তালেব, নন্দিতা, মাখনসহ সঙ্গীত জগতের উদীয়মান শিল্পীরা।