ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে, ডাকঘরকেও ডিজিটাল করতেই হবে। ডাকের দিন শেষ হয়নি আরও বাড়ছে। হিমায়িত খাদ্য পরিবহণে ট্রেনে চিলিং বগি ও ডাকের অন্যান্য গাড়িতে চিলিং ভ্যান চালু করা হবে। ডাকঘরকে ধ্বংস স্তুপ থেকে তুলে শীঘ্রই দেশের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠাণে পরিনত করা হবে।
বৃহস্পতিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী গাজীপুর জেলা শহরে নির্মানাধীন প্রধান ডাকঘরের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন। এ সময় পোস্ট মাস্টার জেনারেল ফরিদ আহমেদ, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাসরিন পারভীন এবং ডাক অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত প্রধান এ ডাকভবনটি নির্মিত হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল কমার্সের জন্য ডাকঘর এখন একটা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল যুগের উপযোগী ডাক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ডাকঘর ডিজিটালাইজেশনের পথের নকশা তৈরি সম্পন্ন হচ্ছে। ডাক ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার পাশাপাশি কর্মরত ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীকেও ডিজিটাল দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে ডাকঘর ডিজিটাল করার কাজ আমরা শুরু করেছি। এর ফলে উৎপাদনমুখী কর্মকা-ের ডিজিটালাইজেশনের ভিত তৈরি হয়েছে। ডাক বিভাগের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি করা এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহসাই ডাকসেবা কাঙ্খিত মানে উন্নীত হবে।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে ডিজিটাল বাণিজ্যের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডাকঘরকে ডিজিটাল করা অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল চিঠিপত্রের যুগ শেষ হওয়ায় দুর্দশাগ্রস্থ ডাক সার্ভিসকে একটা ভাল অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যে আমরা সেটা পেরেছি। দেশব্যাপী ডাকঘরের যে বিশাল অবকাঠামো ও জনবল আছে তা দেশের অন্যকোন প্রতিষ্ঠানের নেই।
তিনি বলেন, হিমায়িত খাবার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে ডাকঘরের বিকল্প নেই। করোনাকালে কৃষকের ফল ও সবজী পরিবহন থেকে শুরু করে চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে ডাক সেবার অবদান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, জরুরী সেবার আওতায় ডাকঘর একদিনের জন্যও বন্ধ রাখা হয়নি। মন্ত্রী ডাক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ডাকঘরকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রণীত ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের (ডিএসডিএল) কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি।
মন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষ এসএমএস, মেইল, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোতে দেশে বিদেশে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলে। এগুলো আমাদের জন্য প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করেছি। ইতোমধ্যে ১৪টি শর্টিং সেন্টার নির্মাণ ও ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রেনে চিলিং বগি ও ডাকের অন্যান্য গাড়িতে চিলিং ভ্যান চালু করা হবে বলে মন্ত্রী ঊল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ডাকঘর দেশের একটি প্রাচীন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠাণ। দেশের ডাকঘর এখনও সবচেয়ে বেশি যোগাযোগের মাধ্যম। দেশে প্রায় ৯ হাজারের বেশি ডাকঘর রয়েছে। দেশ ডিজিটাল হওয়ায় মানুষ এখন চিঠি লিখে না, বরং আগের তুলনায় পার্সেলের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ মানুষ এখন বাজারে গিয়ে কেনাকাটা না করে ঘরে বসে অনলাইন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাকাটা করেন। সেসব মালামাল পার্সেল করে বাড়িতে পৌছে দেওয়ার জন্য ডাকঘরের প্রয়োজন। কেউ যদি মনে করেন ডাকের দিন শেষ- এটি ভুল ধারণা। বরং ডাক বিভাগের চাহিদা আরো বেড়েছে। আমি জানি এ প্রতিষ্ঠাণে প্রচুর দুর্বলতা রয়েছে। যেমন এ প্রতিষ্ঠাণের ডাকঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। সেগুলোকে ধ্বংস স্তুপ থেকে উদ্ধার করে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। আমরা এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করছি। তবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে একটু সময় লাগবে। আমি কথা দিচ্ছি, ডাকঘর শীঘ্রই দেশের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠাণে পরিনত হবে।