৩০ বছরের তরুণী কামরুন নাহার ভূঁইয়া (ইভা)। নিখোঁজ জানিয়ে নগরীর হালিশহর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন নিখোঁজের বড় বোন শামসুন নাহার ভূঁইয়া। যার জিডি নম্বর-১৫৬৪। তারিখ ছিল ২০১৮ সালের ৩১ আগষ্ট। সে হিসেবে তরুণী দীর্ঘ ৪ বছর ধরে নিখোঁজ। ঘটনাটি চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড রহমানবাগ আবাসিক এলাকার। থানা সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ তরুণীর পিতার নাম ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া ও মাতা মনোয়ারা বেগম। উভয়ই মৃত।

জিডিতে বড় বোন উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর একমাত্র ছোটবোন নিখোঁজ ইভাকে ‘সান ইয়াট স্যান চায়না’ গুয়াংজু ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের ০৩ জুলাই তিনি চীন থেকে দেশে চলে আসেন। বড় বোন কোন ভাবে বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তীতে ছোট বোনের অবস্থানের বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে চীনের ওই বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের সকল স্থানে সন্ধান করলেও খোঁজ মিলেনি বলে তৎকালিন জিডিতে জানান।

শামসুন নাহার আরও জানান, নিখোঁজের পর থেকেই তাঁর বোন ইভার ফেইসবুক আইডি, মোবাইল নং, ব্যাংক একাউন্ট সকল কিছুই অচল অবস্থায় রয়েছে। এভাবে ৪ বছর ধরে নিখোঁজ তিনি। বোনকে ফিরে পাবার দাবিতে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও সংবাদ সম্মলনে সন্ধান চেয়ে একটি মুঠোফোন নম্বরও প্রকাশ করেন।

ওদিকে, হালিশহর থানার পুলিশও হন্য হয়ে খুঁজে নিখোঁজ তরুণীকে। কিন্তু কোন সন্ধান পায় না। কিন্তু গত ২৬ আগষ্ট (শুক্রবার) বিকেলে পুরো ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়। নিখোঁজ তরুণী যখন আইনজীবি জসিম উদ্দিন আকন-সহ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে প্রকাশ্যে স্বশরীরে হাজির হন। এমনকি জামাল খানের বাতিঘর, কাজির দেউড়ির রোদেলা বিকেল ও রেডিসনের সামনেও তরুণীকে প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা যায়।

তখন গণমাধ্যমেকর্মীদের সামনে কামরুন নাহার ভূঁইয়া (ইভা) দাবি করেন, ‘তিনি নিখোঁজ নন। বরং তাঁর আপন বড়বোন ও বর্তমান স্বামী শামশুল আরেফিন এবং সাবেক স্বামী হাফিজুর রহমান সোহেল মিলে তাঁর বাবার দেওয়া সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। তাই তিনি প্রাণের বাঁচার তাগিদে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তরুণী বলেন, ‘আমি কেন নিখোঁজ হবো। আমার বড় বোন আমি নিখোঁজ বলে যে জিডি করেছে তা ভুয়া।’ ‘তিনি আমার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। উল্টো আমি তাঁর বিরুদ্ধে জিডি করেছি হালিশহর থানায়। যার জিডি নম্বর-১২৭৮। তারিখ-২৬ আগষ্ট।’

এ বিষয়ে শামসুন নাহার ভূইয়ার মুঠোফোনে কল করা হলে তাঁর স্বামী শামশুল আরেফিন ফোন রিসিভি করে বলেন, ‘আমরা জানতাম তিনি নিখোঁজ। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে দেখলাম স্বশরীরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করলেন। তখনই আমরা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। বড় বোনের সাথে তাঁর জায়গা জমি নিয়ে একটু সমস্যা চলতেছে তাই উল্টা পাল্টা কথা বলতেছে।’

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রকাশ্যে ঘুরছে এমন তরুণী কিভাবে নিখোঁজ বলে দাবি করলেন? তখন তিনি বলেন-‘জায়গা জমির সমস্যা তাই বোনকে জড়িয়ে আবোল তাবোল বলতেছে। ওর জায়গা ও বিক্রি করেছে তা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সুতরাং আমাদের বলার কিছু নেই।’

হালিশহর থানার ডিউটি অফিসার উপ-পুলিশ পরিদর্শক নাজমা পারভীন বলেন, ‘৪ বছর আগের জিডি বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি এ থানায় নতুন যোগদান করেছি। নিখোঁজ ব্যক্তি হাজির হলে স্বভাবতই প্রতিবেদন দিয়ে জিডি ক্লোজ করা হয়।’ মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ নিখোঁজ বলে দাবি করে থানায় জিডি করে পুলিশকে বিভ্রান্তি করলে এর শাস্তি কি, তা জানাতে পারেননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি