বঙ্গবন্ধু গবেষক, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীতা, সাহসীকতা আর আত্মবিশ্বাসের কাছে বাংলাদেশ ঋণী। কারণ বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গবন্ধুর এই তিনটি গুণের সমাহারের মধ্য দিয়ে। সোমবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে গেস্ট অব অনার এবং মূল বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিজ্ঞানী সমিতি (বারিসা) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
বারিসা’র সভাপতি ড. মো. ওমর আলী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি’র পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান, পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. তারিকুল ইসলাম এবং পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. অপূর্ব কান্তি চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারিসা’র সাধারণ সম্পাদক ড. মো. জিল্লুর রহমান। সেমিনারে বারি’র বিভিন্ন কেন্দ্র ও বিভাগের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে মূল বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর বথা বলতে হলে অতি অবশ্যই বঙ্গমাতার কথা বলতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী মানে বঙ্গমাতারও ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী। বঙ্গমাতার ইতিহাস খুঁজতে যেয়ে আমি দেখেছি এই মহিলা তার স্বামীর জন্য যা করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালীর বটবৃক্ষ, আর বঙ্গবন্ধুর ছায়াবৃক্ষ ছিলেন বঙ্গমাতা। তবে আমি বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মনে করি না, তিনি ছিলেন জননেতা। কারণ জনগণ সম্পৃক্ত একটি রাষ্ট্র এই ভূখ- বঙ্গবন্ধুরই অবদান। আর সেই জননেতা হত্যা করেছে এই বাঙালীরা। পৃথিবীর মধ্যে এতো আত্মপর জাতি আর নেই। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- সঠিক তদন্তে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন সঠিক পথে হাটছে না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘সোনার বাংলা গড়তে আমার সোনার মানুষ চাই’। আমাদের বৈশ্বয়িক সমৃদ্ধি হয়েছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে কিন্তু মানুষের কি উন্নতি হয়েছে? আমার তা মনে হয় না। বৈশ্বয়িক সমৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের অধগতি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সোনার মানুষ। আদৌ কি মানুষ সোনার আছে? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বায়বীয় কথা বলা যায়, অনুষ্ঠান বা আনুষ্ঠানিকতা করা যায়! বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করলে বাংলা ও বাঙালীকে বাঁচানো যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, আমরা শরীর নামক বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ তা আমাদের মাঝে উজ্জীবিত আছে। বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়, তিনি সার্বজনীন। তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা। স্বাধীনতার পর অতি অল্প সময় পেলেও দেশকে সুগঠিত করেছিলেন তিনি। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলেই জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতাসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়।